খুলনার ৯ উপজেলায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা

0

খুলনা সংবাদদাতা ॥ খুলনার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৮টির স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন বিকল। কোনও কোনও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই এক্স-রে মেশিন চালানোর টেকনিশিয়ান। এক্সরের পাশাপাশি অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিও বিকল হয়ে আছে বেশিরভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ কারণে খুলনা অঞ্চলে তৃণমূলের মানুষেরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‍বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কয়রার বাসিন্দা আকিমুন্নেছা জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে খালি নেই নেই শুনতে হয়। তাই এখানকার মানুষেরা চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রাইভেট ক্লিনিকে যায়। যদিও প্রাইভেট ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে অনেক বেশি খরচ হয়। তিনি বলেন, ‘কয়রার মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এটাই এখানকার বাস্তব চিত্র।’ দাকোপের মনিন্দ্র নাথ বালা বলেন, ‘হাসপাতালের মেশিনগুলো নষ্ট। তাই সরকারি এই হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাওয়া যায় না। হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হলেও রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি মেরামতকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ন্যাশনাল ইলেকট্রো ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি)। ২০১৭ সালের ২৪ মে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মীর ইমান উদ্দিনের সই করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুলতলা উপজেলা হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি ২০০৪ সালে স্থাপনা করা হয়েছিল। এরইমধ্যে কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে। প্রায় ৭/৮ বছর ধরে মেশিনটি বন্ধ থাকায় অনেক বোর্ড ত্রুটিপূর্ণ। এর খুচরা যন্ত্রাংশ বাজারে ও সরবরাহকারী কোম্পানির কাছে নেই। তাই মেশিনটি মেরামত করা অলাভজনক। কিন্তু এর দুই বছর পর ২০১৯ সালের শেষের দিকে ওই মেশিনটি সচল করেছেন ফুলতলার বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। যদিও বর্তমানে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি চালানোর জন্য সরকারি টেকনিশিয়ান নেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিজস্ব উদ্যোগে বাইরের কর্মচারী এনে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে এই এক্স-রে মেশিনেই রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ফুলতলা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স, ইসিজি মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, তিনটি মাইক্রোস্কোপ মেশিন, দু’টি ডেন্টাল চেয়ার, একটি ওটি লাইট, দু’টি জেনারেটর এবং একটি লেবার টেবিল অচল রয়েছে, জানালেন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দু’টি এক্স-রে মেশিনই বিকল ছিল। সম্প্রতি একটি চালু করা সম্ভব হয়েছে। তবে এক্স-রে মেশিনের টেকনিশিয়ান নেই। স্থানীয়ভাবে এক কর্মচারীকে শিখিয়ে নিয়ে আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে।’ ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তম বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এক্স-রে মেশিনের টেকনিশিয়ান নেই। এক্স-রে মেশিনটিও ৫ বছর ধরে বিকল।’
বটিয়াঘাটা উপজেলা হাসপাতালের স্টোর কিপার টিএম আসাদ্দুজ্জামান বলেন, ‘এখানকার হাসপাতালের ডেন্টাল এক্সরে, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, অটোক্লেভ মেশিনসহ বিভিন্ন প্রকারের ২২টি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে আছে। ২০১২ সালে অচল হয়ে যায় সাকার মেশিনটিও। আর ২০১৪ সালে বিকল হয় ইলেকট্রিক অ্যাস্ট্রোলাইজার মেশিন। টেকনিশিয়ান থাকলেও এক্স-রে মেশিনটি বন্ধ রয়েছে। ’ দাকোপের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হক নিজামী বলেন, ‘এখানের এক্স-রে, অ্যানেসথেসিয়া, অটোক্লেভ, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন, ওটি লাইট, মাইক্রোস্কোপসহ ১৩ ধরনের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে আছে।২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এগুলো বিকল হয়েছে।’ তিনি জানান, আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ পেলে মেশিনগুলো সচল করা সম্ভব। কিন্তু এ বিষয়ে ওপর মহলে প্রতিবেদনসহ চাহিদাপত্র দিয়েও সুফল পাওয়া যায়নি।
ডা. জ্যোতির্ময় মণ্ডল বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে বিকল অবস্থায় পড়ে আছে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন। এখানকার টেকনিশিয়ান খুলনা জেনারেল হাসপাতালে প্রেষণে রয়েছেন। কয়রায় নেই ল্যাব টেকনিশিয়ানও। ডেন্টাল সার্জন থাকলেও যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে।’ পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নীতিশ চন্দ্র গোলদার বলেন, ‘১০ বছর ধরে এক্স-রে মেশিনটি বিকল। তাছাড়া এখানে এক্স-রে মেশিনের টেকনিশিয়ান নেই। উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই দুর্দশার বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা থেকে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরে নতুন করে চাহিদা পাঠাবো।’