করোনা ভাইরাস : বিদেশ ফেরত সবার পরীক্ষার সিদ্ধান্ত

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ দেশে দেশে করোনার বিস্তৃতি ও প্রাণহানি বাড়ায় বিদেশ ফেরত সব যাত্রীকে বিমান ও স্থলবন্দরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এতদিন শুধু চীন ফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো বিমানবন্দরে। এখন থেকে বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করলে বন্দরে স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। গতকাল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আইইডিসিআরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশে আরও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মত দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যমান স্ক্রিনিং পদ্ধতি যথযাত নয় বলেও মত অনেকের। এছাড়া চীন ফেরত যাত্রীরা বিমানবন্দরে কোন পরীক্ষা ছাড়াই দেশে প্রবেশ করেছেন এমন অভিযোগ উঠে জাতীয় সংসদে। এ নিয়ে মন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করা হয়।
এমন আলোচনার মধ্যেই চীন ফেরত এক শিক্ষার্থী জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গতকাল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসকরা তার রোগের উপসর্গ দেখে প্রাথমিকভাবে করোনার লক্ষণ বলে মনে করছেন। যদিও করোনার পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা রংপুরে নেই। পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠাতে হবে। ওই শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত উহান থেকে ২০০ কিলোমিটার দুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২৯শে জানুয়ারি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে দেশে আসেন। দেশে ফেরার পরই তার জ্বর ও সর্দি কাশি দেখা দেয়। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে নীলফামারী থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চীন থেকে ইতোমধ্যে দুই ডজনের বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এতে মৃতের সংখ্যা সাতশ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চীন ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে স্থানীয়ভাবে একজনের দেহ থেকে আরেকজনে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বিমানবন্দরে আসা সবগুলো বিমানকেই স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। আসলে চীন এবং আরও কয়েকটি দেশের যাত্রীদের এই স্ক্রিনিং কার্যক্রমে আনলেই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে এটা চালু করেছি। এটা সব দেশের ফ্লাইটের ক্ষেত্রেই শুরু হয়েছে। তবে এটা নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা বাড়তি সতর্কতা।
শুক্রবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বাংলাদেশের সবগুলো বন্দরে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার সক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আছে কি না- এ প্রশ্নে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, বিভিন্ন এয়ারলাইন্স, বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতায় এ কাজটি করা হচ্ছে। আমরা এয়ারলাইন্সগুলোর সহযোগিতা নিচ্ছি। ফ্লাইটের মধ্যে যে ডিক্লেয়ারেশন ফর্ম দেয়া হয়, তাতে এয়ারলাইন্সগুলো সহায়তা করে। আমরা সম্মিলিতভাবেই করছি। এখানে এয়ারলাইন্সগুলোর সহযোগিতা খুবই জরুরি। যে বন্দরে থার্মাল স্ক্যানার নেই, সেখানে আমরা হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়েছি। থার্মাল স্ক্যানার এবং হাত দিয়ে যেটা করা হয়- দুটোর কার্যক্রম একই। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শনিবার সকাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৮৪ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করলেও কারও দেহে এন করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। চীনের উহান থেকে আসা ৩১২ বাংলাদেশির মধ্যে আশকোনা হজক্যাম্পে থাকা ৩০১ জনের সবাই সুস্থ আছেন। সিএমএইচে থাকা ১১ জনের অবস্থাও ভালো বলে জানান অধ্যাপক ফ্লোরা। প্রয়োজন ছাড়া দেশে সবার মাস্ক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই বলেও জানান তিনি। বলেন, চীনে মানুষকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। কারণ সেখানে আক্রান্ত মানুষ আছে। অন্যরা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এমনটা করছে। আমাদের এখানে এমন পরিস্থিতি নেই।