খুলনায় পাটকলের বদলি শ্রমিক পরিবারে কান্না

0

মো. জামাল হোসেন,খুলনা ॥ মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হওয়ার পর থেকেই খুলনার শিল্পাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের স্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে আনন্দ-উৎসব বিরাজ করছে। কিন্তু একই সময়ে ২০ হাজার বদলি শ্রমিক চাকরি হারিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন। ফলে শিল্পাঞ্চলে একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে কান্না চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত মিলগুলো থেকে বদলিভিত্তিক শ্রমিক ছাঁটাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বদলি শ্রমিক ও মিল কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ নভেম্বর বিজেএমসির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাসিমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় আবারও ১৫ জানুয়ারি এবং তৃতীয় দফায় ২৮ জানুয়ারি সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া বিজেএমসির মিলসমূহে বদলি শ্রমিক নিয়োজিত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আগামীকাল ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মিলের যে সব স্থানে বদলি শ্রমিক প্রয়োজন বা কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে তার যৌক্তিকতার বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেভাবে মিলগুলো একটি তালিকা প্রস্তুতে ব্যস্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্লাটিনাম জুট মিলে ১৬০ জন, ক্রিসেন্ট জুট মিলে ৬০৯ জন, স্টার জুট মিলে ১০০ জন, কার্পেটিং জুট মিলে ১৪১ জন, জেজেআই মিলে ১৫০ জন, ইস্টার্ন জুট মিলে ৭০ বদলি শ্রমিককে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রাখার জন্য তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। এর জন্য যথাযথ যুক্তি উপস্থাপন করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। কাজ না থাকা বদলি শ্রমিক আক্কাস আলী জানান, বদলি কাজ করে যে মজুরি পেতাম তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলতো। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে কাজ না থাকায় চরম সমস্যায় পড়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো কাজ পাইনি। তাই ছেলে-মেয়ে নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছি। বদলি শ্রমিক রাজন জানান, মিলে পর্যাপ্ত পাট ক্রয়ের মাধ্যমে পূর্ণ উৎপাদনে গেলে হয়তো আমাদের কাজ হারাতে হতো না। তিনি মিলের পাট ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের আবারও কাজে লাগানোর দাবি জানিয়েছেন।
খুলনার প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএর সভাপতি শাহানা শারমিন জানান, বদলি শ্রমিক পরিবারগুলো কাজ না পেয়ে বেকার হয়েছে। বদলি শ্রমিক কাজে লাগালে খরচ কম হয়। বিশেষ করে যে সব কর্মচারীর সেটআপের বিপরীতে বদলি/দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে কাজ করা হচ্ছে, সেখানে মিলের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। তিনি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার মতো পাট ক্রয়ের মাধ্যমে পাটকলগুলোকে আরও সচল করে বদলি শ্রমিকদের আবার কাজে নিয়োগ করার দাবি জানান। ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান খান কামরুল ইসলাম জানান, মিলের স্থায়ী শ্রমিকের অনুপস্থিতে বদলি শ্রমিকদের কাজ দেওয়া হতো। বর্তমান বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ মিলের স্বার্থে উৎপাদন খরচ কমাতে যথাযথ কারণ ও প্রয়োজন ছাড়া বদলি হিসেবে কাজে লাগাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এটি মিলের স্বার্থে করা হচ্ছে। বিজেএমসি খুলনা জোনাল প্রধান বনিজ উদ্দিন মিঞা জানান, অপ্রয়োজনে শ্রমিক লাগিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে মিলগুলোতে পর্যাপ্ত পাট ক্রয়ের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিলে আবারও এসব শ্রমিকরা কাজ পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।