সানি বাহিনীর একের পর এক হামলা, চরম আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়ার ক্ষমতাসীন দল আশ্রিত সানি বাহিনীর একের পর এক ব্যবসায়ীদের ওপর হামলার ঘটনায় চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে সানি বাহিনীর হামলায় দুজন ব্যবসায়ীসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। অথচ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ব্যবসায়ী মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পূর্ব বারান্দী মোল্লাপাড়ার আব্দুল জলিলের ছেলে গোলাম কিবরিয়া সানির নেতৃত্বে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। এই বাহিনীর সদস্যরা হচ্ছে-পূর্ব বারান্দীপাড়া মেটো পুকুরপাড় এলাকার সলেমানের ছেলে সালাম, পশ্চিম বারান্দীপাড়া কদমতলার মৃত রমিজ মিয়ার ছেলে তালেব, হামিদ গাজীর ছেলে ইসমাইল, রবির ছেলে চায়না সাগর, মিজানের ছেলে শান্তি, আবুল হোসেনের ছেলে তপু, মোল্লপাড়া ঢাকা রোড এলাকার দ্বিপন প্রমুখ। সানির সহযোগী সন্ত্রাসীদের অধিকাংশই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়া এদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাসীন দল আশ্রিত এবং দুর্ধর্ষ প্রকৃতির হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। সূত্র জানায়, ওই বাহিনীর সদস্যদের বারান্দীপাড়া কদমতলার নাঈম মসজিদ এলাকা এবং মোল্লাপাড়ায় সানির বাড়ির আশেপাশে আড্ডা দিতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি দুপুরে স্থানীয় পিয়াজিও মটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আশরাফুজ্জামান মুকুল এবং তার চার কর্মচারীকে মারপিট করে সানি বাহিনীর সদস্যরা। মোল্লাপাড়ায় ব্যবসায়ী মুকুলের গোডাউন রয়েছে। তিনি বাইরে মোটরসাইকেল রেখে গোডাউনের ভেতরে ঢুকছিলেন। পরে বেরিয়ে এসে দেখেন তার মোটরসাইকেল লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় সানির নেতৃত্বে তার ওপর আক্রমন করা হয়। এ সময় তাকে রক্ষা করতে চারজন কর্মচারী এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদেরও মারপিট করে। সেখানে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে ব্যবসায়ী মুকুল এবং তার ৪ কর্মচারীর ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা। অবশ্য ব্যবসায়ী মুকুল তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। এর আগে গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় সানির নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ঢাকা রোড তালতলায় ব্যাটারি ব্যবসায়ী সুমনকে ছুরিকাঘাত করে। ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধে একটি টায়ার দোকানের ম্যানেজারে ইন্ধনে সন্ত্রাসীরা সেখানে এসে হামলা চালায়। প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন। পরে এ ঘটনায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে যশোর টায়ার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান কোতয়ালি থানায় মামলা করেন। গোলাম কিবরিয়া সানিসহ বেশ কয়েকজনকে এ মামলায় আসামি করা হয়। বর্তমানে আসামিরা জামিনে রয়েছে। সূত্র জানায়, মামলা ছাড়াও শিক্ষানবিশ আইনজীবী হওয়ায় গোলাম কিবরিয়া সানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যশোর টায়ার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির পক্ষ থেকে গত ৬ নভেম্বর যশোর জেলা আইজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছিলো। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সানি বাহিনী ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা একের পর এক ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করায় ব্যবসায়ীমহলে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সানি বা তার সন্ত্রাসী সহযোগীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, সানি গং বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। বিশেষ এক ব্যক্তির অনুরোধে ব্যবসায়ী মুকুলের ওপর হামলার ঘটনা আপাতত মীমাংসা করা হলেও সানির পিতাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ফের ঘটালে সানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তার পিতাকে হুঁশিয়ার করা হয়।