সমঝোতা!! খুলনা জিআরপি থানায় আলোচিত গণধর্ষণের প্রমাণ পায়নি পিবিআই

0

খুলনা ব্যুরো ॥ খুলনায় আলোচিত রেলওয়ে থানা (জিআরপি) হাজতের অভ্যন্তরে এক নারীকে আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ঘটনার প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় তদন্ত সংস্থাটি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তবে ওই নারীকে থানায় রেখে মারপিট করার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তারা। সোমবার দুপুরে পিবিআই খুলনার দপ্তরে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান জানান, অভিযোগকারীর মেডিকেল পরীায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। তারা ওই নারীকে ডিএনএ টেস্টের পরামর্শ দিলেও তিনি এই টেস্ট করাতে রাজি হননি। পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ আবু বকর মামলাটি তদন্তকালে এক নম্বর আসামি রেলওয়ে থানা পুলিশের সাবেক ওসি উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ কর্তৃক মামলার বাদীকে ধর্ষণ ও যৌন পীড়নের অভিযোগের সত্যতা পাননি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। তবে, তদন্তে সাবেক ওসি উছমান গনি পাঠান কর্তৃক বাদীকে মারপিট করার সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের অভিযোগকারী আসামির নামে আগেও খুলনা, দৌলতপুর ও যশোর কোতয়ালি থানায় মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে মামলা রয়েছে। আর তার মা বাদী হয়ে ২০১১ সালে আসামিকে অপহরণের অভিযোগ করে ঢাকার পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই ঘটনার তদন্তেও এটি সাজানো নাটক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। অপর সূত্র জানিয়েছে, ধর্ষণ ও নির্যাতন মামলার বাদী ওই নারীর সাথে ওসিসহ অন্য আসামিদের (পুলিশ সদস্যদের) মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। যে কারণে মোটা অংকের অর্থের লেনদেনের বিনিময়ে বাদী উল্লিখিত মামলা থেকে তাদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন। এমনকি তিনি মামলা তদন্তে পিবিআইকে কোন সহযোগিতাও করেননি।
সূত্র মতে, ২০১৯ সালের ২ আগস্ট বেনাপোল-খুলনাগামী ট্রেনের মধ্যে ফুলতলা থেকে এক নারীকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে খুলনা জিআরপি থানায় নিয়ে আনা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর তাকে রাতে থানা হাজতে রাখা হয়। ওই রাতে খুলনা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচজন পুলিশ আটক ওই আসামিকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে বলে ৩ আগস্ট আসামি নিজে খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে অভিযোগ করেন। এরপর তিনি বাদী হয়ে ওসি উছমান পাঠানসহ পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে জিআরপি থানায় ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১৫ (১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। এতে তিনি দাবি করেন, ২ আগস্ট ঘটনার রাতে খুলনা জিআরপি থানায় ছিলেন ওসি উছমান গনি পাঠান, এসআই গৌতম কুমার পাল, এসআই নাজমুল হাসান, কনস্টেবল মিজান, হারুন, মফিজ, আব্দুল কুদ্দুস, আলাউদ্দিন, কাজল, দুই নারী কনস্টেবলসহ বেশ কয়েকজন। ওই রাতে গৃহবধূকে ওসি উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এরপর থানা হাজতে রেখেই ওসি আগে তাকে ধর্ষণ করে। পরে পুলিশের অন্য চার সদস্য তাকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর আদালতের নির্দেশে ৫ আগস্ট তার ডাক্তারি পরীা সম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য, উল্লিখিত ঘটনার পর পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ। অপর সদস্যরা হলেন-কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ ম কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম। ঘটনার পর পর অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ওসি উছমান গণি পাঠান ও উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসানকে প্রত্যাহার (কোজড) করা হয়। এর মধ্যে ওই নারীর দায়েরকৃত হেফাজতে নির্যাতন আইনের মামলায় সম্প্রতি চার্জশিট দাখিল করেছে রেল পুলিশ।