ইসমাত আরা সাদেকের আসনে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন?

0

আকরামুজ্জামান ॥ সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর কারণে আসনটি শূন্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ২১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নির্বাচন বিধি অনুযায়ী শূন্য এ আসনটিতে তিন মাসের মধ্যে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কবে নাগাদ এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও আসনটি ঘিরে ইতিমধ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে-কে পাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন? সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকের পরিবারের কেউ, নাকি জেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী দলীয় কোনো নেতা?
ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেকের কন্যা স্থপতি নওরীন সাদেক গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি নির্বাচনী এলাকায় একাধিক সভায় অংশ নিয়েছেন। প্রতিদিন গণসংযোগও অব্যাহত রেখেছেন। সম্প্রতি কেশবপুর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আসনটি থেকে নির্বাচিত হয়ে মায়ের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার আশা ব্যক্ত করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরাও তাকে ঘিরে মাঠে সরব রয়েছেন।
অন্যদিকে সাদেক পরিবারের বাইরেও নির্বাচনী এলাকায় যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদারের লোকজনের জোর তৎপরতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শাহীন চাকলাদার দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা না দিলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরব উপস্থিতির মাধ্যমে মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তার পক্ষে জেলা সদর থেকে নেতাকর্মীরা কেশবপুরে গিয়ে গণসংযোগ করছেন। গত একাদশ নির্বাচনে আসনটি থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন শাহীন চাকলাদার। অবশ্য পরে প্রত্যাহার করে নেন তিনি। সে হিসেবে উপ-নির্বাচনে শাহীন চাকলাদার দলীয় মনোনয়নের জন্য শক্ত দাবিদার বলে তার পক্ষের নেতাকর্মীরা প্রচার করছেন। সব মিলিয়ে এই আসনটির উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে যশোর আওয়ামী লীগে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
দলীয় মনোনয়ন কে পাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কেশবপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার রুহুল আমীন বলেন, ‘আমিতো নৌকার লোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে নৌকা দেবেন তার পক্ষে কাজ করবো। তবে কেশবপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন আর সাদেক পরিবারের কাউকে এমপি হিসেবে দেখতে চান না। বিকল্প হিসেবে অন্য কাউকে চাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেক জীবিত থাকা অবস্থায় কেশবপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়রানি, অত্যাচার করেছেন। তার পরোক্ষ মদদে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে, মামলা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা ওই পরিবারের প্রতি এখন ত্যাক্ত-বিরক্ত। এসব কারণে নেতাকর্মীদের এখন একটাই দাবি সাদেক পরিবারের বাইরে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হোক। সে হিসেবে প্রথমে আমরা চাই কেশবপুরের মাটিতে জন্ম নেয়া দলের কোনো ত্যাগী নেতাকে দেয়া হোক মনোনয়ন। আর সেটি যদি সম্ভব না হয় তাহলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে মনোনয়ন দিলে আমাদের আপত্তি নেই। তিনিই আমাদের সুখ-দুঃখের সাথী।’ মাস্টার রুহুল আমীন বলেন, ‘বিগত ৬ টি বছর ধরে আমরা যখন অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হয়েছি তখন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার আমাদের পাশে ঢাল হিসেবে ছিলেন। তিনি সবসময় আমাদের সহযোগিতা করেছেন। এজন্য তিনি মনোনয়ন পেলে নেতাকর্মীরা খুশি হবেন।’
তবে এ বিষয়ে কেশবপুর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমীর হোসেন বলেন, ‘দলীয় প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাকে মনোনয়ন দেবেন সেটি একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। তবে আমি আশা করছি মাননীয় নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করবেন। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। গতবার মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আমাকে বিবেচনায়ও রাখা হয়েছিলো। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান থাকায় আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ফলে আশা করছি নেত্রী এবার আমার প্রতি সদয় হবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত ৬ বার মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছি। দল ভালো করে আমার বিষয়ে জানেন। ফলে উপ-নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন পাবো বলে আশা করছি।’
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, কেশবপুর আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে ইসমাত আরা সাদেকের কন্যা নওরীন সাদেকের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে অনেকটা আশ্বস্ত করা হয়েছে। ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে এএসএইচকে সাদেক পরিবারের আওয়ামী লীগের প্রতি নানা অবদান তুলে ধরে ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ থেকে অনেকটা স্পষ্টও হয় নওরীন সাদেকই শেষমেষ মনোনয়ন পাবেন। তবে প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেক জীবিত থাকা অবস্থায় কেশবপুর আওয়ামী লীগের বর্তমান মূল নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এসব নেতাকর্মীর অভিযোগ, জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা নির্যাতন নিপীড়ন করেন। ক্ষুদ্ধ এই নেতাকর্মীরা সাদেক পরিবারের বাইরে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে ঘিরে জোর লবিংয়ে আছেন। প্রয়োজনে এ বিষয়ে তারা দলীয় সভানেত্রীর সাথে দেখা করে তাদের ক্ষোভের কথা জানাবেন বলে একাধিক নেতা জানান।
তবে দলের অপর একটি সূত্র জানায়, কোনো কারণে যদি সাদেক পরিবারের কাউকে মনোনয়ন না দেওয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যশোর জেলা ও কেশবপুর শাখার আরও অনেক নেতার নাম উঠে আসবে। এ হিসেবে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক পৌরমেয়র কেশবপুরের সন্তান এসএম কামরুজ্জামান চুন্নুও শক্তভাবে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। সব মিলিয়ে কে পাবেন এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন তা দেখার অপেক্ষায় আছেন কেশবপুরের পাশাপাশি গোটা যশোরবাসীও।