কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা না করলে আমরা সরকারের সঙ্গে নেই

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে (আহমদীয়া মুসলিম জামায়াত) রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্‌ফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জে মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে নগরের জামতলায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহে মহাসম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। মহাসম্মেলনের কারণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-পোস্তাগোলা সড়ক বন্ধ করে দেয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। সম্মেলনের একপর্যায়ে মঞ্চের একাংশ ভেঙে পড়লে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সম্মেলনে। মহাসম্মেলনের প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য শহরের বিভিন্ন সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর সদস্যরা। মহাসম্মেলনের কারণে নগরের মিশনপাড়ায় অবস্থিত আহমদীয়া মুসলিম জামায়াতের একমাত্র মসজিদের সামনে পুলিশি নিরাপত্তা বসানো হয়েছে। এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নগরের চাষাঢ়ায় বাঁশের লাঠি হাতে অবস্থান নেয় মজলিসে তাহাফ্‌ফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের জেলা শাখার নেতাকর্মীরা। মহাসম্মেলনে আল্লামা শফী বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে আছি। সরকারের কোনো ভয় নেই। তবে আমাদের দাবিও রয়েছে। কাদিয়ানীরা রাসূল (সা.)কে শেষ নবী হিসেবে মানে না। তাই আমরা তাদের কাফের ঘোষণা করেছি। আমরা চাই সরকারও তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করুক। আমাদের এই দাবি না মানলে আমরা সরকারের সঙ্গে নাই।
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন শুরু হলো। এ আন্দোলন সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাবে। আমরা চাই কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। আর যারা কাদিয়ানীদের পক্ষে কথা বলবে তারাও কাফের।’ অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে তাদের কাফের ঘোষণা করতে হবে। আমাদের এ আন্দোলন অনেক দিনের। কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা না করলে আন্দোলন আরো বেগবান হবে।’ এদিকে মহাসম্মেলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি ও নাসিকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।
মহাসম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামীর মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরের সভাপতি নূর হোসাইন কাশেমী, সাইদুর রহমান, আবদুল হামিদ, আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, নূরুল ইসলাম জিহাদী, আবদুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, জুনায়েদ আল হাবীব, ইমাদুদ্দীন, আবদুল বারী, আশরাফ আলী, আবদুল কুদ্দুস, তাফাজ্জুল হক, নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, আশেকে এলাহী, আবদুল হাই মেশকাত, মুহাম্মদ ইসহাক, মামুনুল হক, নজরুল ইসলাম কাশেমী, ওবায়দুর রহমান খান নদভী, মাহবুবুল হক কাশেমী, শফিকুল ইসলাম, আবদুল আউয়াল, আবদুল কাদির, আবু তাহের জিহাদী প্রমুখ। এই সম্মেলনকে সফল করতে আয়োজকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে মাইকিংও করা হয়েছে। তাদের এই সম্মেলনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত আহমদীয়া সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর মধ্যে চরম ভীতি বিরাজ করছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছেন, ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন। তিনি বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি কিংবা কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য যাতে প্রদান করা না হয় সেজন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল। সমাবেশ ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।