দূতাবাসের বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণে বারণ

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ঢাকায় বিদেশি মিশনগুলোতে কর্মরত কোনো বাংলাদেশি ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক’ হিসেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন না। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কথা নোট ভারবাল মারফত কূটনৈতিক মিশনগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও দূতাবাসের প্রতিনিধি হিসেবে ৪৬ জন বিদেশি এবং সহায়ক বা দোভাষী হিসেবে ২৮ জন বাংলাদেশি কর্মকর্তা বরাবরের মতো এবারো নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছেন এবং তাদের প্রত্যেকের নামে পর্যবেক্ষক কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের তরফে কারও কার্ড বাতিলের কোন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি। তবে দূতাবাসগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোট ভারবাল পাঠানো ছাড়াও এ নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ বিষয়ক এক বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মন্ত্রী বলেন, দূতাবাসের বাংলাদেশি স্টাফদের ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক’ বানিয়ে বিদেশি মিশনগুলো আইন ভঙ্গ করেছে। এ অবস্থায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনুমতি পাওয়া দূতাবাসগুলোর বাংলাদেশি স্টাফদের ভোট কেন্দ্রে না পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যদিও পুরো বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে। তারপরও এখানে মিশনগুলোর দায়-দায়িত্ব রয়েছে।
তারা বাংলাদেশের আইন জানেন। সরকারের তরফেও তাদের বিদ্যমান আইনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, সুতরাং এখন তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তারা তাদের যেসব বাংলাদেশি কর্মচারীকে ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক’ বানিয়েছেন, তাদের অবশ্যই সেন্টারে পাঠানো উচিত হবে না। এ সময় বাংলাদেশে থাকা কূটনীতিকদের সর্বাবস্থায় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং দায়বদ্ধতা থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ ঢাকার দুই সিটির ভোট গ্রহণ। দূতাবাসগুলোর পর্যবেক্ষণ টিমে থাকা ৪৬ বিদেশির সঙ্গে তাদের সহায়ক হিসাবে বাংলাদেশিদের পর্যবেক্ষক কার্ড ইস্যু করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সময়ে তাদের থামানো যায় কি-না? এমন প্রশ্নেও আসে। তবে সব প্রশ্নকে ছাড়িয়ে যে বিষয়টি প্রধান্য পায় তা হলো আইনি বাধা সত্বেও দূতাবাসের বাংলাদেশি স্টাফদের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসাবে নির্বাচন কমিশন অনুমতি দেয় কিভাবে? জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটি আমি জানি না। তবে আমরা মনে করি এখানে যেসব বিদেশি সংস্থা বা দূতাবাস আছে তারা তাদের কোড অফ কনডাক্ট জানে। আইন মতে, আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক যারা হন তারা কেউ বাংলাদেশি নাগরিক হতে পারেন না। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষককে অবশ্যই অ-বাংলাদেশি হতে হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখানে বিদেশি দূতাবাসগুলো তাদের বাংলাদেশি কর্মচারীদের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে আইন ভঙ্গ হয়েছে। আইন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হওয়ার শর্ত অবশ্যই ‘বিদেশি নাগরিক’ হতে হবে- এমনটা পূনর্ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, দূতাবাসগুলো বিদেশি নাগরিককে এনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বানাক, এতে কারও কোন আপত্তি নেই। অথবা বাংলাদেশিদের তারা ‘অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক’ বলুক, এতেও কোনো সমস্যা নেই। দূতাবাস প্রতিনিধি বা রাষ্ট্রদূতরা বড় রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর সঙ্গে আলাপেও কোন বাধা নেই। কিন্তু তারা কোন অবস্থাতেই আমাদের সিস্টেম, আইন এবং নিয়ম-নীতিমালা ভঙ্গ করতে পারে না।
মিশনগুলোতে পাঠানো নোট ভারবালে যা বলা হয়েছে- এদিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসাবে ঢাকাস্থ দূতাবাস বা হাইকমিশনের বিদেশি কূটনীতিক যারা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি পেয়েছেন তাদের পর্যবেক্ষণে কোন বাধা নেই জানিয়ে ঢাকাস্থ সব বিদেশি মিশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নোট ভারবাল পাঠায় গত ৩০শে জানুয়ারি। সেখানে স্পষ্ট করেই বলা হয়- বিদেশি দূতাবাসের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলে মিশনে কমর্রত কোনো বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসাবে থাকতে পারবে না। অনানুষ্ঠানিক ওই কূটনৈতিক পত্রে বলা হয়, ১লা ফেব্রুয়ারি সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্যে কয়েকটি মিশন পর্যবেক্ষক দল গঠন করছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যে ২০১৮ সালের বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিদেশি দূতাবাসগুলোতে কমর্রত বাংলাদেশি নাগরিকরা ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক’ হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার যোগ্যতা রাখেন না। তাই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলে দূতাবাসগুলো তাদের মিশনে কমর্রত কোনো বাংলাদেশিকে যেনো না রাখে। পত্রের সমাপনী অংশে ফের বলা হয়- মন্ত্রণালয় আশা করে মিশনগুলো উত্থাপিত বিষয়টি তাদের বিবেচনায় রাখবে।