করোনা ভাইরাস : বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা মৃত বেড়ে ২১৩

0

করোনা ভাইরাস মহামারিকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বেইজিংও। বিদেশি পর্যটকদের সেখানে ভ্রমণ না করতে আহ্বান জানিয়েছে। ক্রমাগত হারে চীনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, এই রোগে মারা গেছেন অন্তত ২১৩ জন। আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৯ হাজার ৮২০ জন। মার্কিন গণমাধ্যম অনুসারে, ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ২৩ দেশে। এ অবস্থায়, চীনকে একঘরে করে দিচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের চীনে ভ্রমণ না করতে সতর্কতা জারি করেছে। পাকিস্তান সরকার ও কেনিয়া এয়ারওয়েজ চীনে তাদের সকল ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে। তুর্কি বিমান সংস্থাগুলো সাময়িকভাবে চীনে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। চীনে আটকা পড়া নাগরিকদের সরিয়ে আনতে তোড়জোড় চালাচ্ছে একাধিক দেশ। এ খবর দিয়েছে সিএনএন, বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
করোনা ভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রস আধানম ঘেব্রেইয়েসাস বলেন, ভাইরাসটি কেবল চীনেই নয়, অন্যান্য দেশেও সংক্রমিত হচ্ছে। উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে, ভাইরাসটি দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংবলিত দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে টেড্রস বলেন, এই ভাইরাসটি ‘নজিরবিহীন মহামারীর’ সৃষ্টি করেছে। এটির মোকাবিলা নজিরবিহীনভাবে করা হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে চীনের ওপর ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আস্থা হারানোর কোনো ইঙ্গিত নয় বলে জানান তিনি। ডব্লিউএইচও চীনের ওপর আস্থা না হারানোর কথা জানালেও অনেক দেশই চীনকে এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের নিজস্ব অঞ্চলগুলোও মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। গুগল, ইকেয়া, স্টারবাকস ও টেসলা ইতিমধ্যে চীনে তাদের সকল কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
কেন বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা?
অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় যথাযথ চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। সেসব দেশে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে প্রাণহানি ঘটাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাত্র একমাসের মধ্যে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারে পৌঁছেছে। তাই ভাইরাসটির দ্রুত সংক্রমণের হার নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। এখন পর্যন্ত মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইবোলা মহামারির ঘটনা ঘটে পশ্চিম আফ্রিকায়। সে সময় দেখা গেছে, কত সহজে দরিদ্র দেশগুলো এ ধরনের মহামারি সামলাতে হিমশিম খেতে পারে। নতুন করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা নিয়ন্ত্রণ অবিশ্বাস্যরকমের কঠিন হতে পারে। এখনো সে পর্যায়ে পৌঁছায়নি ভাইরাসটির সংক্রমণ। তবে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে আরো বেশি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে ডব্লিউএইচও। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ দিতে পারবে তাদের কর্মকর্তারা। এখন পর্যন্ত পাঁচ বার বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছে ডব্লিউএইচও ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু, যেটায় ২ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়; ২০১৪ সালের পোলিও মহামারী; ২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস মহামারি; ২০১৪ ও ২০১৯ সালে ইবোলা মহামারি, যাতে ১১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
ফ্লাইট বন্ধ
করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখান থেকে অন্যান্য দেশে গমনকারী নাগরিকদের মাধ্যমেই মূলত ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। তবে ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ থেকে মানুষে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে। ভাইরাসটি কতটা ভয়ানক ও সংক্রামক সে সমপর্কে না সুস্পষ্ট তথ্য না থাকায় বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে বহু দেশ। যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার তাদের নাগরিকদের চীনে ভ্রমণ করতে নিষেধ করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে চতুর্থ মাত্রার সতর্কতা জারি করেছে। বলেছে, মন্ত্রণালয় সকল আমেরিকানকে তাদের চীন সফর পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে শুক্রবার পার্লামেন্টকে বলেছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে চীনে ভ্রমণ সতর্কতা বৃদ্ধি করা হোক। চীনের সঙ্গে সকল বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে ইতালি ও পাকিস্তান। এছাড়া, এয়ার ফ্রান্স কেএলএম এসএ, বৃটিশ এয়ারওয়েজ, জার্মানির লুফথানসা, ভার্জিন এটলান্টিক, কেনিয়া এয়ারওয়েজ সহ বিশ্বজুড়ে বহু বিমান পরিচালনা সংস্থা চীনে তাদের ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। জাপানের বিমান পরিবহণ সংস্থা এএনএ হোল্ডিংস জানিয়েছে, তারা চীনে সকল ফ্লাইট বন্ধ করতে পারে।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি
করোনা ভাইরাস যত ছড়িয়ে পড়ছে ততই আন্তর্জাতিক বাজারে আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও ভাইরাসটির প্রভাব নিয়ে চাপা উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহসপতিবার বন্ড ক্রেডিট রেটিং বিষয়ক প্রতিষ্ঠান মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিস জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক বাজারে প্রতীয়মান। আলফাবেট ইনকরপোরেশনের গুগল, সুইডেনের ইকেয়া ও মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট টেসলা ইতিমধ্যে চীনে কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। চীনের শিল্পাঞ্চলের চারটি প্রদেশে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে লুনার নিউ ইয়ার ছুটি ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। চীনের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নতুন করোনাভাইরাসটি ২০০৩ সালের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপাইরেটরি সিনড্রোম বা সারস এর চেয়ে কম প্রাণঘাতী। তবে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন নতুন ভাইরাসটির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সারসের চেয়ে বেশি হবে। কেননা, বিশ্বে চীনের আর্থিক প্রভাব এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি।