যশোরে মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে চুরি হওয়া ১০০ ব্যাটারি উদ্ধার : দু প্রকৌশলীসহ আটক ৭

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় গ্রামীণফোন কোম্পানির একটি টাওয়ার থেকে চুরি যাওয়া ৪৮টিসহ চোরাই ১শ ব্যাটারি উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। একই সাথে চোরাই কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ ও তালা ভাঙার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানির সাবেক চার কর্মচারী ও সাবেক একজন কারারক্ষীসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে দুজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। গতকাল সোমবার আটক সাতজনকে আদালতে সোপর্দ করেছে ডিবি পুলিশ। এদের মধ্যে চারজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শম্পা বসু তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ডিবি পুলিশের অভিযানে আটক সাতজন হচ্ছেন, যশোর শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া আমতলা এলাকার হারেজ মৃধার ছেলে হারুন অর রশিদ মিঠু (৩৮), ঝুমঝুমপুর মসজিদ সংলগ্ন বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য খায়রুজ্জামানের ছেলে বর্তমানে বকচর র‌্যাব অফিসের পাশের জনৈক ডা. মাহাবুব আলমের বাড়ির ভাড়টিয়া মেজবাহ উদ্দিন রাজু ওরফে মিরাজ (৩২), রাজারহাটের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম রাকিব ওরফে চঞ্চল (৩৮) ও তার পিতা বর্তমানে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার তুলসিডাঙ্গা গ্রামের জনৈক দীন মোহাম্মদের বাড়ির ভাড়াটিয়া সাবেক কারারক্ষী আব্দুর রহিম মোল্লা (৫৯), যশোরের ঝুমঝুমপুর দক্ষিণপাড়ার ইউনুছ আলীর ছেলে মোস্তফিজুর রহমান রিমু (২৭), সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের হিরু মোল্লার ছেলে খায়রুল ইসলাম (৩০) এবং সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার রঘুনাথপুর মোড়লপাড়ার ইউছুফ আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন (৩৬)।
সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সংক্রান্ত বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১১ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৩টার দিকে বাঘারপাড়ার ধলগ্রাম বল্লামুখ এলাকার বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন কোম্পানি টাওয়ার থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকার ৪৮টি ব্যাটারি চুরি হয়ে যায়। হ্যাজবোল্ট ও গ্রিল ভেঙে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বাঘারপাড়া থানায় মামলা হলে তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ। প্রথমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে একজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন ডিবি পুলিশের এসআই সোলায়মান আক্কাস। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়া ওই চোরের নাম রাকিবুল ইসলাম রাকিব ওরফে চঞ্চল। এরপর ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মদের নেতৃত্বে একটি টিম গত রবিবার রাজারহাটে অভিযান চালিয়ে চঞ্চলকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরায় অভিযান চালিয়ে চোরচক্রের আরও ৬ জনকে আটক করা হয়।
পুলিশ প্রশাসনের ওই মুখপাত্র জানান, আটককৃতদের মধ্যে নিজাম উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বাঘারপাড়ার গ্রামীণফোন টাওয়ার থেকে চুরি যাওয়া ৪৮টিসহ চোরাই ১শ ব্যাটারি, ৪৯টি সার্কিট, কুলিং ফ্যান ২২টি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া বাঘারপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয় চোরচক্রের ব্যবহৃত একটি ডাবল কেবিন পিকআপ। অন্য চোরদের কাছ থেকে টাওয়ারের তালা ভাঙা কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আটককৃতদের মধ্যে হারুন অর রশিদ মিঠু, মেজবাহ উদ্দিন রাজু ওরফে মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান রিমু ও রাকিবুল ইসলাম রাকিব ওরফে চঞ্চল এক সময় বাংলালিংক, গ্রামীণফোন ও রবি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাদের দায়িত্ব ছিলো টাওয়ারের ব্যাটারি ইন্সটলেশনসহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল কার্যক্রম পরিচালনা করা। ফলে তারা টাওয়ার বিষয়ে অভিজ্ঞ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা মোবাইল ফোনের টাওয়ারে চুরি করছেন। ঘটনার দিন এই চারজন পিকআপে করে গ্রামীণফোনের ওই টাওয়ারে যান। এরপর তারা তালা ভেঙে ব্যাটারি চুরি করে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, চঞ্চল তার পিতা সাবেক কারারক্ষী আব্দুর রহিম মোল্লাকে চুরি করা ব্যাটারি বিক্রি করার জন্য দিতেন। এ কারণে তারা আব্দুর রহিম মোল্লাকেও আটক করেছেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, মূলত চোরাই মালামাল কিনে থাকেন আটক নিজাম উদ্দিন। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় চুরি যাওয়া ৪৮টি ব্যাটারি। এছাড়া তার বাড়ি থেকে চোরাই আরও ৫২টি ব্যাটারি এবং বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চোরচক্রের অধিকাংশ শিক্ষিত। এদের মধ্যে চঞ্চল ও মিঠু দুজনই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন স্থানের মোবাইল ফোন টাওয়ারে চুরির সাথে যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা ও খুলনার একাধিক চক্র জড়িত। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। এদিকে সোমবার চোরচক্রের আটক সাতজনকে আদালতে সোপর্দ করেছে ডিবি পুলিশ। এদের মধ্যে হারুন অর রশিদ মিঠু, মেজবাহ উদ্দিন রাজু ওরফে মিরাজ, রাবিকুল ইসলাম রাকিব ওরফে চঞ্চল ও মোস্তাফিজুর রহমান রিমু ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।