দুই কোটি টাকা হাতিয়ে চম্পট : প্রতারণার জালে সাড়ে ৩ হাজার নারী

0

সেলিম হায়দার, তালা (সাতক্ষীরা) ॥ ‘উপশম মানব কল্যাণ সমিতি’ নামের এক এনজিও’র প্রতারণার জালে আটকা পড়েছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সাড়ে ৩ হাজার গ্রাহক। গ্রামের দরিদ্র ও সাধারণ এই নারী গ্রাহকরা ২ কোটি টাকা খুইয়ে এখন বিভিন্ন মহলে ধর্না দিচ্ছেন। এছাড়া টাকা ফেরত চাওয়ায় তাদেরকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এনজিও’র ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রায় দু শ ভুক্তভোগী নারী গত রোববার সকাল থেকে তালা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান গ্রহণ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
তালা উপজেলার জালালপুর, মাগুরা, খলিশখালী ও ইসলামকাটি ইউনিয়নের নাজমা বেগম, শিউলি রাণী, লোপা, তাছলিমা, খান দেলোয়ার ও আলতাফ গাজীসহ ভুক্তভোগীরা বলেন, যশোর কেশবপুর উপজেলার কথিত এনজিও মানব কল্যাণ সমিতি (উপশম মানব কল্যাণ সমিতি) ২০১৫ সালে তালার মাগুরা বাজারে তাদের সঞ্চয়, ডিপিএস ও ঋণ কার্যক্রম শুরু করে। এসময় কেশবপুর উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামের আমিনুর সরদারের ছেলে ও সমিতির মাগুরা শাখা ম্যানেজার জাহাঙ্গীর সরদার তালা উপজেলার ধুলন্ডা গ্রামের পবিত্র দাশের স্ত্রী পার্বতী দাশ, মাগুরা গ্রামের আজব আলী সরদার ও তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, ফলেয়া গ্রামের মৃত মুনছেপ শেখের ছেলে সহিদুল শেখ, খলিশখালী গ্রামের তপন ক্ন্ডুুর ছেলে বিশ^জিৎ কুন্ডু ও মৃত কেয়ামত গাজীর ছেলে মিঠুন গাজী, মাদরা গ্রামের মৃত প্রদীপ মন্ডলের স্ত্রী ফাল্গুনী মন্ডল, মঙ্গলানন্দকাটি গ্রামের রোকসানা খাতুন, বাউখোলা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে বিলকিস খাতুন এবং চরগ্রামের খান আয়ুব আলীর স্ত্রী শিউলি রাণীকে মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন।
ভুক্তভোগীরা বলেন, সমিতির কার্যক্রমের বিশ^স্ততা দেখানোর কৌশল হিসেবে সমিতির ম্যানেজার মাগুরা বাজারের পাশে ১ শতক জমি কিনে সেখানে একটি পাকা ঘর নির্মাণ শুরু করেন। আর এরই মধ্যে ম্যানেজার ও মাঠকর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে দরিদ্র নারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সঞ্চয় ও ডিপিএস’র কার্যক্রম শুরু করেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন গ্রামের সাড়ে ৩ হাজার দরিদ্র মহিলা সাপ্তাহিক সর্বনি¤œ ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২শ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় এবং মাসিক সর্বনি¤œ ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস’র টাকা জমা করেন। এভাবে ৩ বছর ব্যবধানে প্রায় ২ কোটি টাকা জমা হবার পর ২০১৮ সালের শেষের দিকে সমিতির কার্যক্রম আকস্মিক বন্ধ করে দিয়ে ম্যানেজার জাহাঙ্গীর সরদারসহ সমিতির কর্মীরা গা ঢাকা দেন। পরবর্তীতে রাতের আঁধারে ম্যানেজার জাহাঙ্গীর তার বিশ^স্ত কর্মী মোস্তাফিজুর ও তার পিতা আজব আলী সমিতির সকল আসবাবপত্র এবং কাগজপত্র চুরি করে সরিয়ে নিয়ে যান। এ অবস্থায় দরিদ্র মহিলারা তাদের তিলে তিলে সঞ্চয় ও ডিপিএস বাবদ জমানো অতিকষ্টের টাকা ফেরত চাইলে উপশম মানব কল্যাণ সমিতির ম্যানেজার নানা তালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর সরদারসহ প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত না দিতে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন। এদিকে সমিতির নামে গ্রাহকদের প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও মাগুরা বাজারের শফিকুল ইসলামের ইলেক্ট্রনিক্স মালামাল বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা, দেলোয়ার হোসেনের রড-সিমেন্ট বাবদ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা এবং সমিতির অফিস ঘর নির্মাণ বাবদ রাজমিস্ত্রি আলতাফ হোসেনের প্রায় ৯৮ হাজার টাকা ম্যানেজার জাহাঙ্গীর সরদারের কাছে পাওনা রয়েছে। এ ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।