খাবারে অ্যালার্জি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নানা রকম খাদ্য, যা আমরা খেয়ে থাকি, আমাদের শরীরে লাগে বা ভেতরে ঢোকে এবং তার বিরুদ্ধে অতি বা পরিবর্তিত ও বর্ধিত প্রতিক্রিয়া শরীরে হলে তবে তাকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া বলে। গরুর দুধ, গরুর গোশত, ডিম, কলা, বেগুন, চিংড়ি, ইলিশ মাছ তো আমরা সবাই খাই। কেউ কেউ এসব খেয়ে পেটে ব্যথা, হাঁপানি বা সর্দিতে ভোগেন। এগুলোই খাদ্যের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন। ছয় থেকে আট ভাগ শিশু এবং এক থেকে দুই ভাগ বৃদ্ধ সচরাচর খাদ্যে অ্যালার্জিতে ভুগে থাকেন। তবে জন্ম হওয়ার প্রথম বছরের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।
প্রকারভেদ
ফুড অ্যালার্জি :খাদ্য গ্রহণ করার পর অস্বাভাবিক ইমুনোলজিক্যাল ছাড়া অন্য প্রতিক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করার পর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
কোন কোন খাদ্য থেকে অ্যালার্জি হয়ে থাকে?
প্রায় সব রকমের খাদ্য থেকে অ্যালার্জি হয়ে থাকে, বিশেষ করে গরুর দুধ ও মাংস, ডিম, বাদাম, সয়াবিন, ইলিশ, চিংড়ি, পুঁটি, বোয়াল, শৈল মাছ, বেগুন, কুমড়া, কচু ইত্যাদি।
খাদ্যে অ্যালার্জিজনিত লক্ষণগুলো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নানাভাবে দেখা দেয়। যেমন- ত্বক বা চামড়া চুলকাতে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে চাকা চাকা হয়ে লাল হয়ে ওঠে।
চোখে চুলকায়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, লাল হয়ে থাকে, ফুলে ওঠে।
ওপরের শ্বাসনালিতে, নাকে ও গলায় চুলকাতে থাকে। গলা ফুলে গেছে বলে মনে হয়, এমনকি কথা বলার সময় অসুবিধা হয়, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ বন্ধ ভাব, অনেক সময় শব্দও থাকে।
নিচের শ্বাসনালিতে শ্বাসকষ্ট, কাশি, দম খাট খাট ভাব, বাঁশির মতো আওয়াজ।
পরিপাকতন্ত্রে বমি বমি ভাব, পেটে ক্র্যাম্প বা ব্যথা, ডায়রিয়া দেখা যায়। জননতন্ত্রে-স্ত্রী ও পুরুষ অঙ্গে চুলকাতে থাকে ও ইউটেরাসে ক্র্যাম্প বা ব্যথা শুরু হয়।
কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম মাথাব্যথা ও রক্তের চাপও কমে বা বেড়ে যেতে পারে।
কীভাবে এ রোগ নির্ণয় করা যায়?
রোগের ইতিহাস থেকে, যেমন কত সময় ধরে শুরু হয়েছে রোগের লক্ষণ, খাদ্য গ্রহণ ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যবর্তী সময় এবং অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস, অ্যাজমা, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস রোগে ভুগে থাকেন কিনা।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষা- স্কিন প্রিক টেস্ট, স্পেসিফিক আইজিই।
খাদ্যতালিকা থেকে অ্যালার্জিজনিত খাদ্যদ্রব্য বাদ দিয়ে পরীক্ষা :রোগীর ইতিহাস ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অ্যালার্জিক খাবার শনাক্ত করার পর ওই খাবার দুই থেকে ছয় সপ্তাহ বাদ দেওয়ার পর যদি রোগের লক্ষণগুলো সেরে যায়, তবে বুঝতে হবে যে ওই খাদ্যই এই অ্যালার্জির জন্য দায়ী।
অ্যালার্জিজনিত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে পরীক্ষা :এ পদ্ধতিতে অল্প থেকে বেশি মাত্রায় খাদ্য রোগীকে খেতে দেওয়া হয়। যদি ১০ গ্রাম শুকনা খাবার ও ৬০ গ্রাম ভেজা খাবার দেওয়ার পরও কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখা দেয়, তবে বুঝতে হবে ওই খাদ্য দ্বারা তার অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা খুব কম।অ্যালার্জি খাদ্য না খেয়েও অ্যালার্জি খাদ্যের সংস্পর্শে এলেও কি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে?
হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হতে পারে। যেমন- কড়াইতে চিংড়ি সিদ্ধ করার সময় বায়ুবাহিত কিছু প্রোটিন বের হয় এবং শ্বাসনালির ভেতরে ঢুকে অ্যানাফাইলাটিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে।
এটা বোঝার উপায় হলো, যদি অ্যালার্জিক খাবার খাওয়া হয় এবং ওই খাদ্য খাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যদি বেশি ব্যায়াম করা হয়, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সচরাচর দেখা দেয়।
অ্যালার্জিজনিত খাদ্য খাওয়ার পর অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা কতটা?
সাধারণত অ্যালার্জিজনিত খাদ্য খাওয়ার পর শুধু অ্যাজমা হয় না, তবে অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে অ্যাজমার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে অ্যালার্জিজনিত খাদ্য খাওয়ায় অন্যান্য প্রতিক্রিয়া, যেমন- ঠোঁট ফুলে ওঠে, মুখে চুলকায়, নাক দিয়ে পানি পড়ে. চোখ ফুলে ওঠার সঙ্গে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীদের জিজ্ঞাসা করলে ২০ থেকে ৬০ ভাগ মনে করেন, তাদের অ্যাজমার জন্য কোনো না কোনো খাদ্য দায়ী। যেসব খাদ্যকে তাদের অ্যাজমার জন্য দায়ী মনে করেন, সে খাদ্য তাদের খাওয়ানোর পর দেখা যায়, মাত্র ২ থেকে ৫ ভাগ ক্ষেত্রে তাদের ফুসফুসের ক্ষমতা কমে গেছে বা অ্যাজমা রোগের তীব্রতার পরিমাণ বেড়েছে।
শিশুদের ছয় থেকে আট ভাগ অ্যাজমা এই অ্যালার্জিজনিত খাদ্য থেকে হয়ে থাকে। বড়দের ক্ষেত্রে খুব কমই খাদ্য থেকে হয়ে থাকে। তাই অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীরা প্রায়ই অ্যালার্জিজনিত খাদ্য খান না, যদিও ওই খাদ্যগুলো খেলে তাদের অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো ভয় নেই।