ডায়াবিটিসের ‘স্বাস্থ্যকর’ অভ্যাস কতটা স্বাস্থ্যকর?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে ঠিকই। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শহরের নামজাদা এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় ঘোষ বলেন, ‘মানুষ যেটা করেন, সেটা হল কার্বোহাইড্রেট খাওয়াই বন্ধ করে দেন। অথচ, তেলের ব্যবহার কিন্তু কম হয় না বাড়িতে।
উপোস করে থাকলে ওজন কমবে। এমন ধারণা অনেকেরই।
কিন্তু, চিকিৎসকরা বলছেন, সে ধারণাও ভ্রান্ত। দীর্ঘক্ষণ না খেলে মেটাবলিজমের হার কমে যায়।
এই সময় জীবন যাপন ডেস্ক: অফিসে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের অর্ণব চট্টোপাধ্যায়। সহকর্মীরা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ছুটলে ধরা পড়ে, রক্তে শর্করার মাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাওয়ার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অর্ণব। প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগেই ডায়াবিটিস ধরা পড়েছিল তাঁর। চিকিৎসককে অর্ণব প্রশ্ন করেন, ‘আমি তো খাওয়াদাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছি। চিনি ছুঁইই না। তা হলে কেন সুগার বাড়ল?’ তাঁর এহেন ‘স্বাস্থ্যকর’ অভ্যেসের কথা শুনেই সমস্যার আসল কারণ খুঁজে পান চিকিৎসক। সেগুলো অবশ্য শুধু অর্ণবেরই নয়, আরও অনেক ডায়াবিটিস আক্রান্তেরই সমস্যা।
খাবার ছেড়ে ওজন কমানো
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে ঠিকই। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শহরের নামজাদা এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় ঘোষ বলেন, ‘মানুষ যেটা করেন, সেটা হল কার্বোহাইড্রেট খাওয়াই বন্ধ করে দেন। অথচ, তেলের ব্যবহার কিন্তু কম হয় না বাড়িতে। ফলে শরীরে ক্যালরি প্রবেশের হারও কমে না।’ চিকিৎসকদের তাই পরামর্শ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুষম খাবার এবং শরীরচর্চায় মন দিন। সুজয়ের পরামর্শ, একটা দশ সেন্টিমিটার ব্যাসের থালার অর্ধেক পরিমাণ সবুজ শাকসব্জি, বাকি অর্ধেককে দু’ভাগ করে শর্করা এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।
উপোস করে থাকলে ওজন কমবে। এমন ধারণা অনেকেরই। কিন্তু, চিকিৎসকরা বলছেন, সে ধারণাও ভ্রান্ত। দীর্ঘক্ষণ না খেলে মেটাবলিজমের হার কমে যায়। যার ফলে ওজন কমার বদলে থমকে যেতে, এমনকী বেড়েও যেতে পারে। পাশাপাশি, শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে এবং কমে যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা।
কৃত্রিম সুইটনারের ব্যবহার
ডায়াবিটিস হলে অনেকেই চিনির বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম সুইটনার (যেমন সুগার ফ্রি, স্টিভিয়া) ব্যবহার করতে শুরু করেন মুখ মিষ্টির অভ্যেস বজায় রাখতে। চিকিৎসক এবং ডায়াটেসিয়ানরা একে ‘ভালো’র বদলে বিপজ্জনকই বলছেন। এন্ডোক্রিনোলজিস্ট শুভঙ্কর চৌধুরীর কথায়, ‘আর্টিফিসিয়াল সুইটনার্স মনকে একটা ছদ্ম-নিশ্চয়তা দেয়, যার ফলে মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলেন। ধরুন, কেউ পায়েস খাচ্ছেন, সেখানে আর্টিফিসিয়াল সুইটনার ব্যবহার করা হল বলে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত এক জন এক বাটির বদলে দু’বাটি খেয়ে ফেললেন। চিনির ক্যালরি বাঁচলেও দুধ আর চালের ক্যালরি তো শরীরে যোগ হলই।’
কার্বোহাইড্রেট ছেঁটে ফেলা
কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার, যেমন ভাত-রুটি খাওয়া বন্ধ করে দেন অনেক ডায়াবিটিস আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেটাও স্বাস্থ্যকর অভ্যেস নয়। কারণ, শরীরে শর্করা জাতীয় খাবারও প্রয়োজন। না হলে হঠাৎ করে সুগার ফল করে যেতে পারে। ডায়াটিসিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষের বক্তব্য, ‘আমরা ডায়াবাটিস আক্রান্তদের বলি, ভাত-রুটি খাওয়া পুরো ছেড়ে না দিতে। কারণ, আমাদের পরিবেশে শরীরে শর্করার প্রয়োজন। আমরা বলি, রোগী চাইলে নিয়ন্ত্রিত ভাবে মিষ্টিও খেতে পারেন। শুধু ক্যালরি গ্রহণের মাপটা এক থাকলেই হল। তবে যাঁরা ক্যালরি মেপে খেতে পারবেন না, তাঁদের মিষ্টির ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলাই ভালো।’