শার্শায় আমনের লোকসান মাথায় নিয়ে বোরো চাষে ব্যস্ত কৃষক

0

মনিরুল ইসলাম মনি, শার্শা (যশোর) ॥ প্রচণ্ড শীত ও আমনের লোকসান মাথায় নিয়ে যশোরের শার্শায় পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধানের চাষ। কৃষকরা এখন জমি প্রস্তুত ও চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শার্শার ১১ টি ইউনিয়নের ১৮০ টি গ্রামেই বোরোর চাষাবাদ চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌষ মাস শেষে মাঘের প্রথম সপ্তাহেও শীত পড়ছে। তবুও শার্শার কৃষকরা থেমে নেই। আবহাওয়া অনুকূলে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক থাকলে সুষ্ঠুভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তারা। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে জমি প্রস্তুত ও চারা রোপনের কাজ। শার্শা উপজেলার কৃষক খাজুরা গ্রামের আব্দুল্লাহ জানান, আমনের লোকসান মাথায় নিয়ে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করছি। স্যালোর পানিতে আমাদের চাষাবাদ করতে হয়। সবাই একসাথে জমি তৈরি করার কারণে স্যালোর ওপর চাপ পড়ে। তিনি জানান, সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে অর্ধলাখ টাকার বেশি খরচ হবে। ওই গ্রামের আরেক কৃষক জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল প্রায় ২০ হাজার টাকা। দেড় বিঘাতে ধান পেয়েছেন প্রায় ২০ মণ, যার মূল্য প্রতিমণ সাড়ে ৫শ’ টাকা হিসেবে ১১ হাজার টাকা। বিচালিতে পেয়েছেন ৩ হাজার টাকা। তার প্রায় ৬ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তিনিি আরও জানান, বোরো ধানে খরচ আরও বেশি। তার পরেও লোকসান মাথায় নিয়ে ধান চাষ করছি।
কৃষক বাবলুর রহমান জানান, জমি চাষ, রোপন, পানি সেচ এবং কাটা-মাড়াইসহ প্রায় ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা বিঘাপ্রতি খরচ হয়ে থাকে। ফলন হয় ২০-২২ মণ। বর্তমান বাজারে ধানের মণ সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা। যাদের নিজস্ব জমি আছে তাদের কিছু থাকে। কিন্তু যারা বর্গাচাষী তাদের কিছুই থাকে না। এতে করে প্রতিবছর আমাদের লোকসান গুণতে হয়। সাধারণ কৃষকদের অভিযোগ, সরকার যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনে তাহলে ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে। তাদের অভিযোগ, লটারির নামে দলীয় কর্মীদের সরকারি গুদামে ধান দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রকৃত চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া বিরোধী মতের কোন কৃষক সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পান না বলেও জানান তারা। শার্শা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় এবার ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৫ শ হেক্টর বেশি। তিনি জানান, এ বছর ব্রি-ধান ২৮, ব্রি-ধান ৫০, ব্রি -ধান ৬৩, ব্রি-ধান ৬৫, ব্রি-ধান ৬৭, ব্রি-ধান ৮১ সহ হাইব্রিড মিনিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের ধান চাষ হচ্ছে। শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, চলতি বছর বোরো মৌসুমে ৪শ বা তার বেশি কৃষক-কৃষাণীকে এনএডিবির আওতায় সার, বীজ বিতরণসহ বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।