বেপরোয়া প্রাইভেট কারে প্রাণ গেল একই পরিবারের তিন নারীর

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরে বেপরোয়া প্রাইভেটকারে প্রাণ গেল এক পরিবারের তিন নারীর। তারা সম্পর্কে ননদ ও ভাবি। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার পর শহরের পুরাতন কসবা শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কে (পুলিশ লাইন সড়ক) এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছেন শহরের বারান্দীপাড়া মোল্লাপাড়ার ইয়াসিন আলীর মেয়ে যশোর আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসা (২৫), তার বড় বোন তানজিলা ইয়াসমিন তিয়াসা (২৮) ও তাদের খালাতো ভাই মনজুর হোসেনের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথি (২৬)।
এছাড়া ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহত তিথির মেয়ে মনিজুর (৩), পিয়াসার স্বামী লোন অফিস পাড়া আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের শফিকুল ইসলাম জ্যোতি, তার বন্ধু মৃত আবুল কাশেমের ছেলে হৃদয় (২৮) ও শেখহাটির শাহিন হোসেন (২৩)। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে জ্যোতিকে আটক করে পুলিশ। দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেটকারটি জব্দ করে পুলিশ লাইনে রাখা হয়েছে। কোতয়ালি থানার এসআই মোখলেছুজ্জামান বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন। নিহত দুই বোনের চাচা আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, আগামী ২৩ জানুয়ারি তার ভাতিজি পিয়াসার বিবাহোত্তর সংবর্ধনার কথা ছিল।
নিহতের মামা যশোর মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যশোর ২ নম্বর পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহিনুর রহমান ঠান্ডু জানান, শহরের লোন অফিস পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জ্যোতির সঙ্গে তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার বছর দেড়েক আগে বিয়ে হয়। আগামী ২৩ জানুয়ারি জ্যোতির পরিবারে আনুষ্ঠানিকভাবে পিয়াসাকে তুলে নেওয়ার কথা। সেই লক্ষ্যে জ্যোতির বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়। পিয়াসা শুক্রবার রাতে ফোন করে জ্যোতিকে বলে, তারা আলোকসজ্জা দেখবে এবং শহর ঘুরবে। এ কারণে শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে জ্যোতি তার নিজস্ব প্রাইভেটকরটি নিয়ে বের হন। গাড়িতে পিয়াসার বোন তানজিলা, ভাবি আফরোজা তাবাস্সুম তিথি, তার মেয়ে মনিজুর এবং জ্যোতির দুই বন্ধু হৃদয় ও শাহিন ছিলেন। তারা রাতে আলোকসজ্জা দেখে শহরে তাদের স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পালবাড়ি এলাকা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। ফেরার পথে রাত ১ টার পর যশোর শহরের পুরাতন কসবা শহীদ মশিয়ূর রহমান সড়কের (আকিজের গলি) পাশে থাকা অবসরপ্রাপ্ত এক কাস্টমস কর্মকর্তার বাড়ির প্রাচীর ও তার সামনে থাকা বৈদ্যুতিক খুটিতে সজোরে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। গাড়িতে থাকা অন্যরা কমবেশি আহত হন। ঘটনার পরপরই পুলিশ ৯৯৯-এ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কাজল মল্লিক জানিয়েছেন, হাসপাতালে নেয়ার আগেই তিন নারী মারা যান। আর আহতদের মধ্যে হৃদয় ও শাহীনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
যশোর কোতয়ালি থানার ইনসপেক্টর (তদন্ত) তাসমীম আলম জানান, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে জ্যোতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রাইভেটকারের চালকের আসনে তিনি ছিলেন। গাড়িতে উঠার আগে তিনি মদ পান করেছিলেন। ঘটনাস্থলে এলে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের বিল্ডিং এ আঘাত করেন।
ইনসপেক্টর শেখ তাসমীম আলম আরও জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে ওই প্রাইভেটকার চালিয়ে জ্যোতি শুক্রবার ঢাকায় যান এবং ওইদিন রাতে ফেরেন। তিনি কান্ত শরীরে ঘুমানোর চেষ্টা করেন। সে সময় পিয়াসার ফোন পেয়ে তিনি গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হন। হতাহতদের গাড়িতে উঠিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আলোকসজ্জা দেখানোর পর শহরে ঘুরতে বের হন। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে রাতেই জ্যোতিকে আটক করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে (মামলা নম্বর-৫৯, তারিখ-১৮-০১-২০) বলে তিনি জানিয়েছেন।