কেশবপুরে টেপুরবিলে বোরো আবাদ অনিশ্চিত

0

স্টাফ রিপোর্টার, কেশবপুর (যশোর) ॥ যশোরের কেশবপুরে ঘের মালিকের বারোমাসি লিজ নেয়ার চক্রান্তে টেপুরবিলে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার যশোরের জেলা প্রশাসক কেশবপুরে আসলে তার কাছে বিল সংলগ্ন এলাকার শত শত কৃষক ওই বিলের পানি নিষ্কাশনের জোর দাবি জানান। এ সময় তিনি ঘের মালিককে দিয়ে পানি নিষ্কাশন করানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বন্যাকবলিত হাসাডাঙ্গা, নাগোরঘোপ, চিনাটোলা, মধ্যকুল, রতনদিয়া, হাবাসপোল গ্রামসহ ৮/১০ গ্রামের সীমান্তবর্তী স্থানে প্রায় ৫ হাজার বিঘা জমি নিয়ে টেপুরবিল অবস্থিত। এলাকাবাসী ওই বিলের একমাত্র ফসল বোরো ধান উৎপাদন করে সারা বছর খেয়ে পরে বেঁচে থাকেন। এসব গ্রামের মানুষ অতিদরিদ্র এবং কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। ১০/১২ বছর আগে ৩০ পৌষের মধ্যে পানি নিষ্কাশন করে কৃষকদের ধান উৎপাদনের সুযোগ করে দেয়ার শর্তে বিলটি লিজ হিসেবে গ্রহণ করেন হাসাডাঙ্গা গ্রামের আবু তালেব মোড়লের ছেলে সুলতান মোড়ল। কিন্তু চলতি বছর ১৪ জানুয়ারি পানি নিষ্কাশনের সময় শেষ হয়ে গেলেও এখনও বিলে অথৈই পানি রয়েছে। বিল সংলগ্ন এলাকার কৃষকরা এখনও বোরো বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। ওই ঘেরমলিক পানি নিষ্কাশনের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় এলাকার হাজার হাজার কৃষি পরিবার হতাশায় ভুগছেন। জলাবদ্ধতার এ সমস্যা নিরসনে গত ১২ জানুয়ারি এলাকার শহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, প্রদীপ দেবনাথসহ শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি ইউএনও’র কাছে দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ১৬ জানুয়ারি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা সরেজমিনে বিল পরিদর্শন করেন। কৃষক শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ওই বিলের উৎপাদিত ধান এলাকার মানুষের সারা বছরের রুটিরুজি। কৃষকরা যখন বিলের পানি নিষ্কাশনের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে চলেছেন তখন ওই ঘেরমালিক বিলটি বারো মাসের জন্যে লিজ নিতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছেন।
ঘের মালিক সুলতান মোড়লের ম্যানেজার দীপঙ্কার বলেন, ওই ঘেরের অনেক কৃষক তাদের জমি বারো মাসের জন্য ডিড করে দিয়েছে। কিছু কৃষক তা না মেনে বোরো আবাদের ধোঁয়া তুলে পানি নিষ্কাশনের দাবিতে আন্দোলন করছে। যে কারণে সময়মত পানি নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিরসনে অচিরেই কৃষকদের নিয়ে বসা হবে। এদিকে, গত ১৬ জানুয়ারি যশোরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আরিফ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান সাগরদাঁড়ি, চিংড়া ভূমি অফিস ও কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা পরিদর্শনে আসেন। এ খবর জানতে পেরে ওই বিল সংলগ্ন এলাকার শত শত কৃষক উপজেলা পরিষদ চত্বরে জড়ো হয়ে তাঁর কাছে ওই বিলের পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক কৃষকদের সমস্যা শুনে ইউএনও’কে রবিবারের মধ্যে ওই ঘের মালিককে ডেকে টেপুর বিলের পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদের সুযোগ সৃষ্টির নির্দেশনা দেন।