অনিশ্চয়তায় ভোটাররা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ভোটের বাদ্য বাজছে। রাজধানীজুড়ে দিনভর সরব প্রচারণা। প্রার্থীরা ছুটছেন অবিরাম। সমর্থকরা যাচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। চাইছেন ভোট ও দোয়া। গোটা শহর যেন এখন পোস্টারে ঢাকা। নির্বাচনী ক্যাম্পে বাজছে গান। চায়ের কেটলি রেডি সব সময়।
ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশন এলাকাই এমন অবস্থা। প্রার্থী ও সমর্থকদের দৌড়ঝাঁপে বুঝা যায় ভোটের দিন ঘনিয়ে আসছে। এমনিতে সিটি নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে দিন আটেক হলো। কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি’র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগও এসেছে কিছু। মিডিয়া রীতিমতো মেতে আছে নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু একটু ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করলে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হবে।
রাজধানী ঢাকা দু’ ভাগে বিভক্ত হলো কয়েক বছর হলো। উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে লড়ছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বিএনপি প্রার্থীদের। ছুটে চলার প্রচারণার কথা যদি ধরা হয় তাহলে খুব বেশি পিছিয়ে নেই বিএনপি’র প্রার্থীরা। সকাল-বিকাল তারাও ছুটছেন। গ্রেপ্তার বা হয়রানির আতঙ্ক থাকলেও তাদের জনসংযোগে লোকও কম হচ্ছে না। এটি এক চিত্র। আরেকটি চিত্রও আছে। সাদা-কালো পোস্টারে চেয়ে গেছে ঢাকা। কিন্তু গত তিন দিনে রাজধানীর মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, হাতিরপুল, কাটাবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলামোটর, মালিবাগ, মৌচাক, শাহজাহানপুর ঘুরে দেখা গেছে, ৯৫ ভাগেরও বেশি পোস্টার ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক প্রার্থীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে কাঠালবাগান এলাকা পর্যন্ত ঘুরে প্রায় সব পোস্টারই চোখে পড়ে ক্ষমতাসীন দল সমর্থক প্রার্থীর । হাতিরপুল পার হয়ে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেনের কিছু পোস্টার চোখে পড়ে। কোনো কোনো এলাকায় অবশ্য হাত পাখার কিছু পোস্টার চোখে পড়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণার ক্ষেত্রেও প্রায় একই দৃশ্য। বিএনপি’র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে পোস্টার কম দেখার পেছনে প্রধানত দুটি কারণের কথা বলা হয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারণে তাদের কর্মীরা পোস্টার লাগাতে পারছেন না। এছাড়া, পোস্টার লাগালেও তা ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। সরকারি দলের প্রার্থীরা অবশ্য এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। এমনকি আতিকুল ইসলাম এটাও বলেছেন, তাবিথ আউয়াল যদি পোস্টার দেন তিনি লাগিয়ে দিবেন।
প্রচারণার এই বাহাসের বাইরে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ভোটাররা কি নির্বাচনে আগ্রহী হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এর কোনো আলামত মিলছে না। গতকাল জুমার দিনে অনেক মসজিদেই খতিবদের ভোট নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। বিশেষকরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের দোয়া চাওয়ার বিষয়টি তারা বলেছেন। কিন্তু ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট নিয়ে আলোচনায় অনীহা দেখা গেছে। বেশিরভাগ মানুষই এ নিয়ে আলোচনা করতে চান না। গণপরিবহন বা চায়ের দোকান কোথাও ভোট নিয়ে আলোচনা নেই। জিজ্ঞেস করলেও খুব বেশি মানুষ ভোট নিয়ে কথা বলতে রাজি নন। সাম্প্রতিক অতীতের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় এক ধরনের অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তারা। ভোট দেয়ার কি সুযোগ পাবেন, ভোট দিতে কি যাবেন, তাদের ভোট কি গনণা হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব অনিশ্চয়তা থেকে ভোটাররা যতোদিন বের না হতে পারবেন ততোদিন ভোটার সংখ্যা বাড়ার আশা করা কঠিন। চট্টগ্রামের একটি আসনে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনেও ভোটাররা কেন্দ্রে যাননি। অফিসিয়াল হিসাবে ২২ ভাগের কিছু বেশি ভোট পড়েছে ওই নির্বাচনে। সাম্প্রতিক অতীতে অবশ্য ভোটের সংস্কৃতি এটাই।