লোহাগড়ার চরকালনা গ্রামের ফসলি জমি অধিগ্রহণ না করার দাবিতে প্রতিবাদ সভা

0

লোহাগড়া (নড়াইল) সংবাদদাতা ॥ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরকালনা গ্রামে তিন ফসলি জমি ও জনবহুল এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে এ আতংঙ্কে রয়েছেন ছয় শতাধিক পরিবার। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার দাবিতে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) চরকালনা গ্রামে গ্রামবাসী এক প্রতিবাদ সভা করেছেন। গ্রামবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লোহাগড়া ইউনিয়নের মধুমতি নদী ভাঙ্গন কবলিত চরজাজিরা-কালনা জনপদটি অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর। কৃষিকাজ ও দিনমজুর শ্রেণির বেশি মানুষ এখানে বসবাস করেন। মধুমতি নদীর পলিবেষ্টিত তিন ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদন করে গ্রামবাসী জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। কালনাঘাট পয়েন্টে কালনা সেতু ও রেল সেতুসহ রেললাইন ও মহাসড়ক নির্মাণ করায় ইতিমধ্যে অনেক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এলাকার হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তা মেনে নিয়েছেন।
কালনা সেতুর পশ্চিমপাশের্^ সিএস, আরএস ও এসএ রেকর্ডিয় ৪৪ নম্বর চরজাজিরা কালনা মৌজার অবস্থান। ওই অবস্থানসহ পশ্চিমে সিএস ও এসএ রেকর্ডিয় ৮২ নম্বর কালনা মৌজায় তিন ফসলি জমি ও জনবহুল এলাকায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। গত ২৮ ডিসেম্বর উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাসহ লোহাগড়া ও কাশিয়ানি উপজেলার এ্যাসিল্যান্ড ওই এলাকা পরিদর্শন শেষে জানান, সরকার ৮২ নম্বর কালনা মৌজা ও ৪৪ নম্বর চরজাজিরা কালনা মৌজায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে ছয় শতাধিক দরিদ্র পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কয়েক হাজার একর তিন ফসলি জমি নষ্ট হবে। তাই অন্যত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানান তারা। গ্রামবাসীর আয়োজনে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় চরকালনা গ্রামে লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিকদার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সমাজসেবক হেমায়েত হোসেন মোল¬া, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদশা মোল¬া ও ইব্রাহিম মোল¬া, ইউপি মেম্বার গোপাল বসু, ইউপি মেম্বার আনোয়ার হোসেন মৃধা, মো. আকরাম হোসেন, ওয়ালিয়ার রহমান প্রমুখ। লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন উপযুক্ত স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিকদার নজরুল ইসলাম এলাকার দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে আরো ভাল অবস্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা বলেন। চরকালনা গ্রামের নুরু মিয়া (৬৫), রোকেয়া বেগম (৪০) বলেন, আমরা দরিদ্র মানুষ। আমাদের ফসলি জমি চলে গেলে খাবো কি। একই গ্রামের মিনি বেগম (৫০) ও খুকু মনি (৪২) বলেন, আমরা নদী ভাঙ্গনে এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। তারপরেও যদি জমি নিয়ে যায় গাছতলায় থাকতে হবে। রোকেয়া বেগম (৪০) সহ অন্যরা বলেন, কালনা সেতু, রেলসেতু, রেললাইন, মহাসড়কে জমি নিয়েছে। সরকার লোহাগড়ার অন্য কোথাও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলুক। আমাগো সরকার কেন আমাগো ক্ষতি করবে। এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলার এ্যাসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) রাখী ব্যানার্জী বলেন, সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আমরা ভূমি অধিগ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব পর্যায়ে বিষয়টি এখনো যায়নি। মানুষ যাতে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছেন।