আমন ধানে লোকসানের কারণে যশোরে কমছে বোরো আবাদ

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোর সদর উপজেলার ইছালী এলাকার কৃষক হাদিউজ্জামান মিলন। এবছর বোরো আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। অন্যান্য বছরে ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করলেও এবার চাষের জমি কমিয়ে ৩ বিঘায় এনেছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, ধানের দামের তুলনায় এবার চাষের খরচ দ্বিগুণ। যেকারণে ধান আবাদ কমিয়ে অন্য চাষের চিন্তা করছেন তিনি। কৃষক মিলনের মতে এবার আমন চাষে উৎপাদিত ধানের দাম কমে যাওয়ায় তারা বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান গুণেছেন। যেকারণে বোরো আবাদে আগ্রহ হারিয়েছেন তিনি। কৃষিখাতের এমন চিত্র বর্তমান যশোরসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের।
সেচের পানি সঙ্কট, ডিজেল, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও গত আমন মৌসুমে ধানের দাম না পাওয়ায় হতাশা রয়েছে কৃষকদের। বিশেষ করে কষ্ট করে উৎপাদিত ধানের মূল্য না পাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বোরো আবাদের ওপর। ফলে এবছর যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বোরো আবাদ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় এখন বোরো আবাদের প্রস্তুতি চলছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সমেয়র মধ্যে এ অঞ্চলের বোরো আবাদ রোপনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। যারা চাষ শুরু করেছেন তারা ধানের দাম না পেলেও ঝুঁকি নিয়ে চাষ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগও বোরো চাষের জন্য কৃষকদের বাড়তি উৎসাহ দিচ্ছে। চাষিরা বলছেন চলতি মৌসুমেও তাদের ধার দেনা করে চাষ করতে হচ্ছে। বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর এলাকার কৃষক শামসুর রহমান বলেন, গত বছর তিনি বোরো মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন। ফলনও ভালো হয়েছিলো। উৎপাদিত ধান দিয়ে সংসারের আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। এরপর থেকে ধান আবাদ করতে চাননি তিনি। তারপরও আমন মৌসুমে এসে ঝুঁকি নিয়ে চাষ করেন। কিন্ত ধানের দামের অধ্বগতির কারনে এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বোরো আবাদ কমিয়ে দিতে। এ কারণে মাত্র আড়াই বিঘা জমিতে ধান চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাকি জমিতে সবজিসহ অন্যান্য আবাদের চিন্তা করছি। কৃষকরা জানান, জ্বালানি তেলের মূল্য বেশি হওয়ার পাশাপাশি সেচ কাজে অতিরিক্ত খরচ সহ সার্বিক খরচের বিষয় বিবেচনা করে ইতোমধ্যে অনেকেই বোরো চাষ কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে এসেছেন। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদনে সরকার নির্ধারিত ল্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে গেছে, চাষিরা ইতোমধ্যে বোরো আবাদের ল্েয চাহিদা মত বীজতলা তৈরি কাজে নিয়োজিত। অথচ মাত্রাতিরিক্ত শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে অনেকেই তাদের বীজতলা রা করতে পারছেন না। এদিকে সার, জ্বালানি তেলের মুল্য বৃদ্ধিসহ চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদের মতে বোরো আবাদে সেচ খরচ হচ্ছে সবচেয়ে বড় খরচ। তারপর রয়েছে শ্রম খরচ। যশোর সদর উপজেলার নোঙরপুরে কৃষক আজমত আলী জানান, তিনি প্রতি বছরই ধান চাষে দুটি ব্লক পরিচালনা করে আসছেন। গত আমন মৌসুমে বিঘাপ্রতি তিনি তিন হাজার টাকা গচ্চা দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত মৌসুমে বোরো আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছিলো ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এবছর চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এর চেয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে বলে আমার ধারণা। যেকারণে এ অঞ্চলে অধিকাংশ কৃষক বোরো আবাদ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, গত মৌসুমে যশোর জেলায় বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ৬৩ হাজার। এ বছর সেখানে ৩ হাজার হেক্টর কমিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকও এ বছরে বোরো আবাদ কমিয়ে অন্য আবাদের দিকে নজর দিচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষক ধান আবাদ কমিয়ে লাভজনক অন্যান্য ফসলের দিকে আগ্রহী হলে এটি কোনো ক্ষতির বিষয় নয়। বরং এ সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। কারণ এর মাধ্যমে কৃষক একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। তেমনি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে। তবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ধান আবাদেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।