এসআই খায়রুলের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ, ডিএনএতে চিহ্নিত লতিফ 

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোয় ুব্ধ হয়ে যশোরের শার্শার গোড়পাড়া ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ এসআই খায়রুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন গ্রেফতার ব্যক্তির স্ত্রী। পুলিশের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ অভিযোগের সত্যতা না মিললেও অভিযুক্ত অপর ব্যক্তি লতিফের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে ডিএনএ টেস্টে। এমন তথ্য মিলেছে দেশজুড়ে আলোচিত ওই ধর্ষণ ঘটনায় পিবিআই’র তদন্তে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিবিআই’র একজন কর্মকর্তা জানান, গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তারা চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য পেয়েছেন। মূলত অভিযোগকারী গৃহবধূর স্বামী একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন এ কথা সত্য। তবে তিনি মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে একটি দোকান দিতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি জমি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের তৎকালীন ইনচার্জ এসআই খায়রুল আলম ভেবে নেন যে, তার স্বামী এখনো মাদক ব্যবসা করছেন। আর মাদকের টাকা দিয়ে তিনি দোকান বসিয়ে ব্যবসা করতে যাচ্ছেন। এ কারণে এসআই খায়রুল আলম মাদক ব্যবসায়ের মাসোহারা হিসেবে তার কাছে টাকা দাবি করেন। এর আগেও খায়রুল আলম তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ওই স্বামী টাকা দিতে অস্বীকার করায় তার ওপর প্তি হন এসআই খায়রুল। তিনি রাতের বেলায় বাড়িতে হানা দিয়ে ঘুম থেকে তুলে তাকে ধরে নিয়ে যান। এ সময় তার কাছে কোন ফেনসিডিল পাওয়া যায়নি। কিন্তু পরদিন তার বিরুদ্ধে ৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে শার্শা থানায় মামলা করেন এসআই খায়রুল আলম।
পিবিআই’র ওই কর্মকর্তা জানান, টাকা না পেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ফেনসিডিলের মামলা দেয়ায় ুব্ধ হন ওই গৃহবধূ। এবং পুলিশ কর্মকর্তাকে ফাঁসাতে তিনি কারাগারে গিয়ে স্বামীর সাথে এবং পরে একজন আইনজীবীর সাথেও কথা বলেন। এরপর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে তিনি (গৃহবধূ) যশোর জেনারেল হাসপাতালে এসে সাংবাদিকদের কাছে এসআই খায়রুল আলমসহ দু জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং আরো দু জনের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভিযোগ করেন। পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, মূলত অত্যাচারী এসআই খায়রুলসহ কয়েকজনকে শায়েস্তা করতে এ গৃহবধূ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ করেন বলেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
এদিকে শার্শা থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, এ মামলার আসামি লণপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের সাথে অভিযোগকারী গৃহবধূর আগের থেকে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ ছিলো। আব্দুল লতিফ গৃহবধূর পিতার ধর্মভাইয়ের ছেলে। স্বামী কারাগারে যাওয়ার পর তার সাথে লতিফের ফের সেই ‘বিশেষ সম্পর্ক’ হয়। একমাত্র আব্দুল লতিফ আটকের পর আদালতে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পিবিআই সূত্র জানায়, এসআই খায়রুল আলম এবং মামলার ৩ আসামি আব্দুল লতিফ, আব্দুল কাদের ও কামরুজ্জামান কামরুলসহ সন্দেহভাজন আরো কয়েকজনের ডিএনএ পরীার জন্য নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়। ডিএনএ পরীায় একমাত্র আব্দুল লতিফের সাথে তার শারীরিক সম্পর্কের আলামত মিলেছে। সূত্র জানায়, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আসামি কামরুজ্জামান কামরুল ভিকটিমের স্বামীর চাচাতো ভাই। এর আগে কামরুল গৃহবধূর স্বামীকে মারধর করেছিলেন। এ কারণে তারা কামরুলের ওপর ুব্ধ ছিলেন। শায়েস্তা করতে তাকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। সূত্র আরো জানায়, মামলার তদন্ত প্রায় সম্পন্ন। শিগগির এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। উল্লেখ্য, শার্শার ওই গৃহবধূ সাংবাদিকদের কাছে এসআই খায়রুল আলমসহ দু জন তাকে ধর্ষণ এবং আব্দুল লতিফসহ দু জন পাহারায় ছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই খায়রুল আলমকে বাদ দিয়ে শার্শা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। প্রথমে মামলাটির তদন্তে ছিলেন শার্শা থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) ফরিদ ভুঁইয়া। পরে মামলাটি পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করা হয়।