বিমান বিধ্বস্ত : দায় স্বীকার ইরানের ক্ষতিপূরণ দাবি ইউক্রেনের

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ইউক্রেনের যাত্রীবাহী জেট বিমান অনিচ্ছাকৃতভাবে ভূপাতিত করার কথা স্বীকার করেছে ইরানের সেনাবাহিনী। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ শনিবার এক টুইটে বলেছেন, মানবিক ভুলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের এডভেঞ্চারিজমের কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি একে একটি বেদনার দিন বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর আভ্যন্তরীণ তদন্তের প্রাথমিক সারসংক্ষেপ পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এডভেঞ্চারিজমে সৃষ্ট বিপর্যয়ের ফলে ওই সময় মানবিক ত্রুটি দেখা দেয়। তিনি এ সময় নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তাদের ও তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ক্ষমা প্রার্থনা করেন ক্ষতিগ্রস্ত সব দেশের কাছে। কুদ্‌স ফোর্সের প্রয়াত প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর উত্তেজনাপূর্ণ এক সময়ে ওই বিমানটি ভূপাতিত করায় কমপক্ষে ১৭৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে বেশির ভাগই ইরানি নাগরিক। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, টুইটারকে উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে অনলাইন বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের স্পর্শকাতর স্থাপনার খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল বিমানটি। এ সময় মানবসৃষ্ট ভুলে তা ভূপাতিত করা হয়েছে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এর ব্ল্যাকবক্স কারো কাছে হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় ইরান। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সহ পশ্চিমা নেতারা বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য ইরানের দিকে আঙ্গুল তোলেন। ইরানের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই একপর্যায়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন থেকে ওই বিবৃতি দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ১৭৬ জন আরোহী নিয়ে উড্ডয়ন করে ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পিএস৭৫২। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ইরাকে মার্কিন দু’টি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর পরপরই ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবরে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিমানটি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল কানাডার টরন্টোতে। মার্কিন মিডিয়ায় সংশয় প্রকাশ করা হয় যে, বিমানটিকে ইরান শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান মনে করে গুলি করে থাকতে পারে। তারা মনে করেছে , মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। ওদিকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান। তবে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ একটি মেকানিক্যাল ডিগার দিয়ে সরিয়ে ফেলতে দেখা যায়। এতে উদ্বেগ দেখা দেয় যে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ, আনুষ্ঠানিক ক্ষমা দাবি ইউক্রেনের ভুল করে বিমান ভূপাতিত করার জন্য ইরানের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে ইউক্রেন। বুধবার ১৭৬ জন আরোহী নিয়ে রাজধানী তেহরান থেকে ইউক্রেনের ওই বিমানটি উড্ডয়নের পর শত্রুপক্ষের বিমান মনে করে তা গুলি করে ভূপাতিত করার কথা স্বীকার করেছে ইরান। এরপরই ইউক্রেন এমন দাবি করেছে। ওই বিমানের আরোহীদের বেশির ভাগই ইরানি। এর বাইরে ছিলেন কানাডা সহ কয়েকটি দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরোহী। এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইরানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া সহ আরো পদক্ষেপ নিতে হবে অবশ্যই। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন প্রত্যাশা করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও উন্মুক্ত তদন্ত নিশ্চিত করবে ইরান। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনবে। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দাবি করে ইউক্রেন। একই সঙ্গে বিলম্ব না করে চলমান তদন্ত অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে তদন্ত করতে ইউক্রেনের একটি টিম রয়েছে ইরানে। এ সম্পর্কে জেলেনস্কি বলেন, আমাদের ৪৫ জন বিশেষজ্ঞ সেখানে রয়েছেন। তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা ও সহযোগিতা করতে হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। শনিবার দিনের শুরুতে ইউক্রেনের ওই বিমানটি ভুল করে ভূপাতিত করার কথা স্বীকার করে ইরান। বলা হয়, সেনাবাহিনী অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে ওই বিমানটিকে ভূপাতিত করেছে। এজন্য মানবসৃষ্ট ভুলের কথা বলা হয়। তবে এর আগে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিল ইরান। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা গোয়েন্দা তথ্য উল্লেখ করে বলে যে, তারা বিশ্বাস করে বিমানটিকে ইরানই গুলি করেছে।