সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণা : সিইসি’র না, তোফায়েল বললেন বাধা নেই

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নেয়া এবং নির্বাচন সংক্রান্ত ঘরোয়া কাজে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন এমপিদের নির্বাচন কাজে অংশ নেয়ার সুযোগ আছে। গতকাল তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে পৃথক ব্রিফিং এ কথা বলেন সিইসি এবং আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের প্রধান। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় সুবিধাপ্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের প্রচারে বাধা নিয়ে আপত্তি জানাতে গতকাল ইসিতে যায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। ইসির সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, উত্তর সিটির মিডিয়া সেলের সদস্য জয়দেব নন্দী। বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী বিধিমালার অসঙ্গতি তারা তুলে ধরেছেন ইসির কাছে। আর এতে মাহবুব তালুকদার ছাড়া অন্য নির্বাচন কমিশনাররা একমতও পোষণ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা এমপিরা পথসভায় যাবো না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যাম্পেইন করব না।
কিন্তু আমাদের যে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমরা তো ঘরোয়াভাবে মিটিং করতে পারব। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো ক্যাম্পেইনে যেতে পারব না, সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। তারা (ইসি) অনুরোধ করেছেন, এমপিদের ভোট না চাইতে। ভোট চাওয়া ছাড়া আমরা সব করব। নির্বাচনী আচরণবিধিতে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্যদেরও স্থানীয় নির্বাচনে প্রচারে নামার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এনিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, এতে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা প্রচারে নামতে পারলেও আওয়ামী লীগ নেতারা পারছেন না। তোফায়েল বলেন, জাতীয় সংসদ সদস্যরা কিন্তু সুবিধাভোগী না। সুবিধাভোগী হলো অফিস অফ প্রফিট যেটা আমরা এমপিরা পাই না। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, হুইপ, স্পিকাররা পায়। অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির যে বিষয়টি আমাদের শেখ সেলিম, হানিফ, তারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আবার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর, তারা সবাই কিন্তু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তারাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তারা (ইসি) স্বীকার করেছে যে আসলে সংজ্ঞার মধ্যে স্ববিরোধিতা রয়েছে। মাহবুব তালুকদার সাহেব সেদিন যে কথা বলেছিলেন, আজকেও বলেছেন, আমি আমার অফিস বা ঘরে বসেও নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। এটা বাস্তবসম্মত নয়। তবে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণের অংশ হিসেবে ইসির বিধিমালা অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল।
তিনি বলেন, এখন যদি কিছু করি সরকারের জন্য মানুষের চোখে ভালো হবে না, তাদের (ইসি) চোখেও এটি ভালো হবে না। আমরা ঘরোয়াভাবে অফিসে বসে বা মহল্লায় গিয়ে কোনো বাসায় বসে মিটিং করতে পারব, এগুলোতে কোনো বাধা নেই। তাদের অনুরোধ, আমরা যারা এমপি তারা যেন ভোট না চাই। গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হবে, এ ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। যেহেতু আমরা ক্ষমতাসীন দল আমরা এমন কোনো কাজ করব না, যাতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আলোচনার অন্য বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, কারও নামে ওয়ারেন্ট থাকলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নেবে, এতে কিছু করার নেই। ইভিএম সম্পর্কে আমরা বলেছি, এটি সম্পূর্ণ আপনাদের (ইসি) এখতিয়ার।
এদিকে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, কোনো সাংসদ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচনী কার্যক্রমে থাকতে পারবেন না। নির্বাচন সমন্বয়ও করতে পারবেন না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, আওয়ামী লীগ কী দায়িত্ব দিয়েছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে ইসি জানে না। এ ব্যাপারে ইসি অবহিত হলে নিষেধ করা হবে। সিইসি বলেন, আচরণবিধি অনুসারে, নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে বাধা রয়েছে এমন ব্যক্তিরা প্রার্থীর পক্ষে কথা বলতে পারবেন না। ভোট চাইতে পারবেন না। তবে তাঁরা মুজিব বর্ষের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। নির্বাচনের কোনো কার্যক্রম, ঘরোয়া হোক বা বাইরেই হোক, সেটা তারা করতে পারবেন না। বিধিতে সেভাবেই বলা আছে। তাদেরকে আমরা সেটি বুঝিয়ে বলেছি। প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে এমপিরা থাকতে পারবেন কি না-এ প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, আইনে তো তেমন কোনো বাধা-নিষেধ নেই। এমপিরা যেতে পারবে, তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হবে না। বৈঠকে সিইসির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম।