সেই ১২৩২ কোটি টাকা এখনো ফেরত পাননি ব্যবসায়ীরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে জোর-জবরদস্তি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নেওয়া ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা বিগত ১৩ বছরেও ফেরত পাননি ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে এই টাকা তুলে নেয় তখনকার সরকার ও তাদের বিভিন্ন সংস্থা। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের রায়েও টাকা ফেরতের নির্দেশনা আছে। রায়ে আদালত বলেছে, রিট আবেদনকারীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দিতে আইনি কোনো বাধা নেই। তবে রায় পুনর্বিবেচনার যে আবেদন রাষ্ট্রপক্ষ করেছে, তার শুনানি এখনো হয়নি। নির্যাতিত ব্যবসায়ীরা এখন সুদে-আসলে ওই টাকা ফেরত চাইছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ গতকাল বলেন, বিষয়টি আদালতে ঝুলে থাকায় এখন বিচারিক তৎপরতা জরুরি। আইনি লড়াইটা ব্যবসায়ীদের আরও চালিয়ে যেতে হবে বলেও মত দেন এই দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ। জানা গেছে, আজও কোনো অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে প্রমাণিত হয়নি। বরং বারবার প্রমাণিত হয়েছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ছিল ভুল। সেই সময়ে ব্যবসায়ীরা মিথ্যা প্রচারণার শিকার হয়েছিলেন। শুধু হয়রানি ও অর্থ আদায় করতে মামলা করা হয় তাদের বিরুদ্ধে। ওই টাকা ফেরত না দিয়ে সরকার প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করেছে। টাকা ফেরতে আদালতের রায়ের বাস্তবায়ন চায় ব্যবসায়ী- শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই। এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ গতকাল বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানিয়ে ওয়ান- ইলেভেনের সময়ে নির্যাতিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত চাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত রায় মেনে নিয়ে সুদে-আসলে ব্যবসায়ীদের টাকা তাদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে অন্য সবার মতোই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চয়ই ব্যবসায়ীদেরও আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, জোর-জবরদস্তি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নেওয়া সেই ১২৩২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ওই টাকা ফেরত চেয়ে আসছেন নির্যাতিত ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছরেও টাকা ফেরত না পেয়ে তারা হতাশ। ব্যবসায়ীরাও মনে করেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে আপিল বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক টাকাগুলো প্রকৃত মালিকদের ফেরত দেওয়া। অথচ সরকার তা না করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। সর্বশেষ আপিল বিভাগও ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত দেওয়ার পক্ষে রায় দেয়। তারা আরও বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ওই টাকা ফেরত দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। জানা গেছে, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তৎকালীন টাস্ক ফোর্স ইন্টেলিজেন্টস (টিএফআই) কর্মকর্তারা ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করে। এই টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসাবে জমা হয়। শুধু টাকা আদায়ই নয়, অনেক ব্যবসায়ী তখন জেলও খাটেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গত মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময় মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই এভাবে অর্থ আদায়ের ওই ঘটনাকে অনৈতিক এবং বেআইনি বলে মন্তব্য করেছিলেন। এর মধ্যে ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বিষয়ে পৃথক ১১টি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বিভিন্ন সময়ে হাই কোর্টের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ রায় দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ওই টাকা কী অবস্থায় আছে, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কীভাবে আছে, তা সরকার জানে। তবে চলতি হিসেবে টাকাগুলো জমা হওয়াতে এ টাকার কোনো সুদ হয়নি। টাকাগুলো সরকার ফেরত দেওয়ার চিন্তা করতে পারে বলে মত দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে ছিলেন ড. মুরশিদ কুলি খান। বর্তমানে অবসরভোগী এই অর্থনীতিবিদ গতকাল বলেন, আদালতের রায় সবাইকে মানতে হবে। এখন রায় পুনর্বিবেচনার শুনানি পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই। সূত্র জানায়, ১/১১ সরকার ব্যবসায়ীদের জরিমানার নামে শুধু হয়রানিই করেনি, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনও করা হয়। সেই নির্যাতনের বিচার ও জোর করে নেওয়া অর্থ ফেরত চান ভুক্তভোগীরা।