বাণিজ্য ঘাটতি ৫৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতিতেও প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬৮ কোটি ডলার বা ৫৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা (১ ডলার = ৮৫ টাকা)। জুলাই-নভেম্বরে আমদানি ব্যয় কমার পরও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। কারণ রপ্তানি আয় কমেছে আমদানি ব্যয়ের তুলনায় বেশি। বিশ্লেষকরা জানান, বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনীতির জন্য মোটেও মঙ্গলজনক নয়। এতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে সংকট বাড়ছে। তথ্য বলছে, জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬৬৮ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল এর চেয়ে কিছুটা কম, ৬৬৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে এ খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৬ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল এর চেয়ে একটু বেশি, ১৪৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়। জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই ঘাটতি ছিল ৬৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অথচ আগস্ট মাস শেষেও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। এই ৫ মাসে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল আরো বেশি। ৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে খাদ্যপণ্য আমদানি যদি কমে যায় তাহলে খুবই ভালো। দাম কমার কারণে জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ কমলে সেটাও ভালো। তবে ক্যাপিটাল মেশিনারি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি যদি কমে যায় তাহলে উদ্বেগের বিষয়। আর আমাদের এখন সেটিই হয়েছে। ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি বেশ কমেছে। তার মানে, দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। উদ্যোক্তাদের কাছে পর্যাপ্ত ব্যাংকঋণ যাচ্ছে না। অন্যদিকে, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। এর ফলে শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহৃত হচ্ছে না। তবে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-নভেম্বর সময়ে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ১০৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরু করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। অগাস্ট শেষে উদ্বৃত্ত দাঁড়ায় ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বর থেকে ঘাটতি দেখা দেয়।
চলতি হিসাবের ভারসাম্য ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল আরো বেশি, ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভূক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। তবে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ২১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশে। এই বছরের একই সময়ে এসেছে ২১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসাবেই ৪ মাসে এফডিআই বেড়েছে ৪.৪২ শতাংশ। এই ৪ মাসে বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছে ১১২ কোটি ডলার। আগের বছরে একই মাসে এসেছিল ১০৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়ে থাকে। এদিকে, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) প্রবাহের গতি আগের মতোই হতাশাজনক। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে মাত্র ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল আরো কম, ৪ কোটি ডলার। জুলাই-নভেম্বর সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ বাংলাদেশে এসেছে ১৫৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত বছরের এই ৫ মাসে এসেছিল ১৪৪ কোটি ডলার।