“ফেলানী হত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে বাংলাদেশ”

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ চাইলে ফেলানী হত্যা মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে উল্লেখ করে ভারতের মানবাধিকারকর্মী কিরিটি রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ফেলানী হত্যার বিচার একটি প্রতীক মাত্র। প্রতিনিয়ত দুই দেশের সীমান্তে অনেক বাংলাদেশি মারা যাচ্ছে। কিন্তু ফেলানীর হত্যার মতো অন্য কোনও ঘটনা সেভাবে সাড়া ফেলেনি।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর গুলিতে নির্মমভাবে খুন হয় কিশোরী ফেলানী। বিএসএফের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত ফেলানীর মরদেহ কাঁটাতারে ঝুলে থাকে দীর্ঘ চার ঘণ্টা। তার ঝুলে থাকা লাশের ছবি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ফেলানী হত্যার বিচার শেষ হয়েছে। যাতে বেকুসুর খালাস পেয়েছেন অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ান অমিয় ঘোষ। এরপর ন্যায়বিচার চেয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট করা হয়েছিল। বর্তমানে সেটির কী অবস্থা জানতে চাইলে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’ (মাসুম) এর সচিব কিরিটি রায় বলেন, রিটটি বিচারক শুনছেন না। শুনানির জন্য সব তৈরি। যাদের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছিল তারা সবাই জবাব দিয়েছেন। এখন আদালত সেটার শুনানি করে রায় দেবেন, কিন্তু সেটিই হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে করণীয় কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হাতে তার দেশের (বাংলাদেশের) নাগরিক মারা গেছে। বাচ্চা মেয়ে কাঁটাতারে ঝুলেছে, সেটার তারা প্রতিবাদ করতে পারে। অন্ততপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়শ মানুষকে সাম্প্রতিক সময়ে ফেরত পাঠানো হলো। কোথাও কিছু বলা হচ্ছে না।
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি প্রতীকী। এর বিচার চেয়ে বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ চিৎকার করেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে, ফেলানী ঝুলছে নাকি বাংলাদেশ ঝুলছে। রোজই তো মারা যাচ্ছে, কিন্তু ফেলানীর মৃত্যুর মতো সাড়া পড়েনি আর কিছুতে। ভারত তারপরও চুপ করে বসে আছে। কিরিটি রায় মনে করেন, ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন ফেলানীর বাবাকে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সেটির বাস্তবায়ন হওয়াও জরুরি। আইনত করণীয় বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হয়েছে, এরচেয়ে বড় আদালত তো নেই। বাংলাদেশ ইচ্ছে করলে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে। তারা যাবে কিনা এখন সেটাই বড় প্রশ্ন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দাবির মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ফেলানীর বাবা দুদফা বিএসএফের আদালতে সাক্ষী দিলেও ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। তখন রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে আবেদন করে বিজিবি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মামলার পুনর্বিচারেও অমিয় ঘোষকে খালাস দেন বিশেষ আদালত। এই হত্যা মামলায় বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরুর পক্ষে আইনি সহায়তা দিয়েছিলেন কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই মামলায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ, আমরা বাদীও না, আসামিও না। রাষ্ট্রের কাছে প্রমাণ চাইলে আমরা পরিবারকে পাঠানো বা অন্যান্য সাক্ষী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারি। এর বাইরে আমাদের করণীয় নেই। সুপ্রিম কোর্টে করা রিটের সব জবাব আসার পরেও কয়েকবার কার্যতালিকাতে ছিল। কিন্তু এবছর কার্যতালিকাতেই না আসা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা পেলে একধরনের স্বস্তি পাওয়া যেতো, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে যদি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাওয়া যায় তাহলে মানবাধিকার প্রশ্নে, নৈতিক প্রশ্নে আমাদের জয় হয়েছে ধরে নেওয়া যেতো। ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশনায় ফেলানীর বাবাকে ৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে বলার মধ্য দিয়ে তারা স্বীকার করে নিয়েছে যে ঘটনাটি ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্টের শুনানি নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে ফেলানীর বাবার ন্যায় বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটতে পারে, সেই কারণেই এটি জরুরি।