৪৪ মাস আগের জায়গায় সূচক

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ নতুন বছরের প্রথম দুই কার্যদিবস সামান্য উত্থান হলেও ঠিক পরের দুই কার্যদিবস বড় পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। রোববারের বড় পতনের ধারাবাহিকতা গতকালও আরো বেশি হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে ৪৪ মাস আগের অবস্থানে নেমে গেছে। ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক ৬৮ পয়েন্ট কমেছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসই সার্বিক সূচক ১৫৯ পয়েন্ট কমেছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন বছরের প্রথম দুই কার্যদিবস মন্দের ভালো ছিল। ওই দুই দিনে বাজারের সূচক খুব বেশি না বাড়লেও পতন হয়নি বলে বিনিয়োগকারীরা আশা দেখছিলেন। তবে সে আশা আবার হতাশায় পরিণত হয়েছে। গতকাল শেয়ারবাজারে আরো বড় দরপতন হয়েছে। এদিকে দেশের শেয়ারবাজারের অবস্থা ভালো করার জন্য গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হয়। এর পরের কর্মদিবস অর্থাৎ রোববার শেয়ারবাজার তার চিরায়ত রূপে ফিরে গেছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৬৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৩৩১ পয়েন্টে; যা ৩ বছর ৭ মাস ১৯ দিন অর্থাৎ ৪৪ মাস বা ৮৭৯ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ মে গতকালের চেয়ে নিম্নে অবস্থান করছিল ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচকটি। ওই দিন ডিএসইএক্স অবস্থান করছিল ৪ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৫১ পয়েন্টে।
ডিএসইতে গতকাল ৩৭৫ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা গত কার্যদিবস থেকে ৮৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বেশি। ওই দিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৯২ কোটি ৪৬ টাকা। ডিএসইতে ৩৫৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩টির, কমেছে ২৫৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির। ডিএসইতে সূচকের ব্যাপক পতনে গ্রামীণফোনের বড় ভূমিকা রয়েছে। কোম্পানিটির মাধ্যমে ১৬ পয়েন্ট কমেছে। এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ পয়েন্ট এবং স্কয়ার ফার্মার মাধ্যমে ৪ পয়েন্ট পড়েছে। যা বড় পতনের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিম সিমেন্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৬ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খুলনা পাওয়ারের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ১ লাখ টাকার। ১৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এডিএন টেলিকম। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৫৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২২২ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ১৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির দর। সিএসইতে ১৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। ডিএসই তথ্য পর্যলোচনায় দেখা গেছে, অর্থনীতির আকার বাড়ছে, কিন্তু শেয়ারবাজার সে পথে না গিয়ে উল্টো পথে গেছে। আর ভালো শেয়ারগুলোই বেশি দর হারিয়েছে। গত ২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারি নতুন করে ক্ষমতা নেয়ার পর গত ২রা জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সরকারের প্রথম বছরে শেয়ারবাজার সূচকের পতন হয়েছে ১২২৭ পয়েন্ট। শতকরা হারে ২১.৫৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে যেখানে ডিএসইতে দিনে গড়ে ৫৫১ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল, তা সরকারের প্রথম বছরে গড় ৪৮০ কোটি টাকায় নেমেছে। সামপ্রতিক সময়ে মাঝেমধ্যে ৩০০ কোটি টাকার নিচেও লেনদেন হয়েছে। দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা হাজার হাজার কোটি টাকার পুঁজি হারিয়েছেন। গত বছরের ৭ই জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের আগে ডিএসইর বাজার মূলধন (বাজার মূল্যে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির সব শেয়ারের দর) ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। গত ২রা জানুয়ারি তা ৬২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা কমে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৮১১ কোটি টাকায় নেমেছে।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে শেয়ারবাজার তুলনামূলক ভালো ছিল। পরে দুর্বল হয়েছে। ব্যাংকের কারণে শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেক কিছু নিয়েই অনাস্থা তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার উন্নয়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গুজবের কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। তাই গুজব বন্ধ করে পুঁজিবাজারকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট আইনটি পুরোপুরি শক্তিশালী করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান আইনগুলো পুরোপুরি কমপ্লায়েন্স ও প্রয়োগ করা হবে। এর আগে ওই বৈঠকে ডিএসই’র পক্ষে পুঁজিবাজার উন্নয়নে উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনসহ ১১ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে আনয়ন, টি-বন্ডের লেনদেন যথা শিগগিরই চালুকরণ, বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করা, গ্রামীণফোন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্বের দ্রুত নিষ্পত্তি করা। এছাড়া ডিএসই’র করপোরেট কর হার ৩৫% এর পরিবর্তে ১৫% নির্ধারণ, স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডারদের কাছ থেকে ট্রেডের ওপর অর্থ আইন ২০০৫ এর ৫৩ (বিবিবি) অনুযায়ী ০.০১৫% এর পরিবর্তে ০.০৫% হারে উৎসে আয়কর আদায় এবং লেনদেনের ওপর কর হার ০.০১৫% নির্ধারণ করা। প্রস্তাবের মধ্যে আরও আছে অডিট রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বাজারে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সমন্বয় কমিটি গঠন ও ঋণ প্রস্তাবের বিশেষ বিবেচনার অনুরোধ করা হয়।