প্রধান শিক্ষক বললেন, পঙ্গু মানুষকে কীভাবে স্কুলে আনা-নেয়া করবেন?

0

স্টাফ রিপোর্টার, মনিরামপুর(যশোর) ॥ প্রধান শিক্ষকের আচরণে বাকরুদ্ধ হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া অদম্য মেধাবী লিতুন জিরা ও তার বাবা-মা। পিইসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ঠাঁই পেয়েও ভর্তি হয়নি। তাদের অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর কারণেই স্কুলে ভর্তি হয়নি লিতুন জিরা। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে মুখে ভর দিয়ে লিখে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জনকারী অদম্য মেধাবী লিতুন জিরা মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধার সাক্ষর রাখে। সে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে।
লিতুন জিরার মা জাহানার বেগম জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মেয়েকে নিয়ে উপরে উঠতে কষ্ট হবে বিধায় প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী স্যারকে নিচতলার একটি কক্ষে লিতুন জিরার পরীক্ষা নেয়ার অনুরোধ করেন। এতেই প্রধান শিক্ষক তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। একপর্যায়ে লিতুন জিরা ও তার বাবার সামনে তাকে প্রধান শিক্ষক বলেন, বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারলে মেয়েকে (লিতুন জিরা) নিয়ে উপরে উঠতে সমস্যা কোথায়? পঙ্গু মানুষকে কীভাবে স্কুলে আনা-নেয়া করবেন? আপনার পঙ্গু মেয়ের জন্য তো আলাদা ব্যবস্থা করতে পারবো না। অন্যখানে ভর্তি করান। প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণে অঝোরে কাঁদেন লিতুন জিরা ও তার বাবা-মা। হতবাক হয়ে যান তারা। প্রধান শিক্ষকের আচরণে কষ্ট পেয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও কোনোভাবেই মেয়ে এখানে ভর্তি হতে রাজি হয়নি বলে জানান তিনি। অথচ মেয়েকে সরকারি স্কুলে পড়ার জন্য পাশেই বাসা খুঁজছিলেন তারা।
কষ্ট পেয়ে ভর্তি যুদ্ধে মেধাতালিকায় স্থান করেও ভর্তি হয়নি লিতুন জিরা। ভর্তি না হওয়ায় এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসে। অথচ শিক্ষানীতি ২০১০ এ বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধকতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রাখা যাবে না। শিক্ষানীতি ২০১৩-এর প্রারম্ভিক সঙ্গা ২(ঢ)-তে ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর সম-সুযোগভিত্তিক শিক্ষা অধিকার ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।’ অথচ এর কোনোটিই মানেননি প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী। লিতুন জিরা জানায়, প্রধান শিক্ষক স্যার যদি এমন আচরণ করেন তাহলে শারীরিক অসুবিধা দেখে তার সহপাঠীরা কীভাবে দেখবে? তার ধারণা ছিল প্রধান শিক্ষক সহানুভূতিশীল হবেন। লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান জানান, প্রধান শিক্ষকের খারাপ আচরণের কারণে লিতুন জিরাকে ভর্তি করতে কোনোভাবেই রাজি করাতে পারেননি। প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী দুর্ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, কেন মেয়েটি ভর্তি হলো না বুঝতে পারছি না। যশোর জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা মুনা আফরিন জানান, প্রধান শিক্ষকের এমন খারাপ আচরণের কথা লিতুন জিরার বাবা-মা তাকেও জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।