ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসায় এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা লোপাট

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসায় প্রায় দুই কোটি টাকা অডিট আপত্তি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই টাকা অধ্যক্ষ মো. রুহুল কুদ্দুস আত্মসাৎ করেছেন বলে অডিট প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত করা এই ৯ বছরের অডিটে ৩৩ টি খাতে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। এদিকে অধ্যক্ষের অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেছেন রাশিদুল ইসলাম নামে শহরের ব্যাপারিপাড়ার এক যুবক। তবে অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস বলেছেন, মাদ্রাসার গ্রুপিংয়ের কারণে এই অডিটের নামে আমাকে ৬ মাস ধরে ‘আজাব’ দেয়া হয়েছে। অডিট রিপোর্ট সঠিক নয়। আমার বিরুদ্ধে কোন দোষ প্রমাণিত হয়নি।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর নির্দেশে ৩ সদস্য বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি নিয়োগ করা হয়। সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. সারোয়ার হোসেনকে অডিট কমিটির আহবায়ক করা হয়। কমিটিতে মোবারক হোসেন ও নুরুল ইসলাম নামে আরো দুইজন শিক্ষক ছিলেন। সংসদ সদস্যের কাছে জমা দেয়া গোপন অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যক্ষ মো. রুহুল কুদ্দুস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মাদ্রাসার সকল কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ তছরুপ করেছেন, যা ক্ষমার অযোগ্য।
২০১৮ সালের ২৩ মার্চ মাদ্রাসার সভাপতি সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট গ্রহণ করেন। অডিটে বলা হয়, মাদ্রাসার নামে ৭৫৯ শতক জমি আছে। তার মধ্যে লিজ দেয়া আছে ৪৭৬ শতক। এসব জমি থেকে ৬ লাখ টাকা আয় হওয়ার কথা থাকলেও আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ টাকা। বাকি ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকার কোন হদিস নেই। জমির লিজমানি ব্যাংকেও জমা হয়নি। চুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জ ওয়াকফ্ এস্টেট থেকে পাওয়া এক লাখ টাকা পকেটস্থ করা হয়েছে। প্রকাশনী খাত থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা, নিয়োগ থেকে দেড় লাখ টাকা, আপ্যায়ণ ভাউচার থেকে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, যাতায়াত বাবদ ৪ লাখ ২৮ হাজার, অভ্যন্তরীণ বেতন ও ভর্তি খাত থেকে ৩২ লাখ ১৫ হাজার, মাদ্রাসার সভাপতি সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর নাম ব্যবহার করে ২০১৭ সলের ১৭ মার্চ ৮৯৭ নম্বর ভাউচারে ১০ হাজার টাকা তুলে নেন অধ্যক্ষ। শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার হিসেবে পাওয়া এক লাখ, মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণির কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ৭৪ লাখ ১৩ হাজার, উন্নয়ন সংক্রান্ত ৪ লাখ ১০ হাজার, ফজলুল করিমের নিকট থেকে প্রাপ্ত ২৭ টি রসিদ বই থেকে ৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা, জাল ও ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, পাবলিক পরীক্ষা থেকে ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা ও রেজিস্ট্রেশন খাত থেকে ৭ লাখ ২৪ হাজার টাকাসহ ৩৩ খাত থেকে এক কোটি ৬২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা লোপাট করা হয়েছে। বিজ্ঞানাগারসহ কিছু কিছু খাতের কোন হিসাব মাদ্রাসায় নেই বলে উল্লেখ করা হয়। ৯ বছরে ২ হাজার ৩৪১ টি ভাউচার তৈরি করে একই কাজের ভাউচার অন্য মাসে ঢুকিয়ে তহবিল তছরুপ করা হয়েছে। অডিট রিপোর্টে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমান স্বরুপ ১১টি প্রমান সংযুক্ত করা হয়। মাদ্রাসায় দুর্নীতি ও অডিট নিয়ে অধ্যক্ষ মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ’আগের অডিট রিপোর্ট বর্তমান গভর্নিং বডি বাতিল করেছেন। সেটি ন্যায়সঙ্গত ছিল না। অডিটের নামে আমাকে আজাব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি কোন দুর্নীতি করিনি। দুর্নীতি করলে কি আগের সভাপতি আমাকে ছেড়ে দিতেন’? বিষয়টি নিয়ে অডিট কমিটির আহবায়ক সরোয়ার হোসেন জানান, কারো দ্বারা বিরাগ ও প্রভাবিত না হয়ে সাবেক সভাপতির নির্দেশে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি অডিট করেছি। অডিট সঠিক এবং অধ্যক্ষ মো. রুহুল কুদ্দুসের দুর্নীতিও সঠিক। আমরা দুর্নীতির তথ্য প্রমান সংযুক্ত করেছি। এতে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়।