গ্যাস, বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার যাচ্ছে বেসরকারি খাতে

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারে বেসরকারি খাতকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সমপ্রতি জ্বালানি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী, যেকোনও আগ্রহী উদ্যোক্তা কেউ গ্যাস-বিদ্যুতের প্রি পেইড মিটার আমদানি করতে পারবেন। এমনকি চাইলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেশে প্রি-পেইড মিটার তৈরির জন্য কারখানাও বসাতে পারবেন। গ্যাসের এই মিটার বেসরকারি খাতে দিতে বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর মাসে আবাসিক পর্যায়ে খোলা বাজার থেকে প্রি-পেইড ‘ক্রয় ও স্থাপন নীতিমালা-২০১৯’ নামে একটি নীতিমালা করা হয়েছে।
নীতিমালার উদ্দেশ্যে হচ্ছে-দ্রুত আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার বা স্মার্ট মিটারের টেকসই সংযোগ নিশ্চিত করা; গ্যাসের অপচয় ও সিস্টেম লস কমানো এবং গ্যাস সাশ্রয়ে গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধি করা; গ্যাসের প্রকৃত ব্যবহারের ভিত্তিতে বিলিং ব্যবস্থার মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহ সেবাকে জনবান্ধব করা। মিটার স্থাপনে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি অংশগ্রহণের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা। বেসরকারি কোনও একক কোম্পানি এগিয়ে না এলেও প্রি পেইড মিটার তৈরির জন্য দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কারখানা স্থাপন করেছে। তবে, এই দুটি কারখানা করা হয়েছে বিদ্যুতের প্রি পেইড মিটার তৈরির জন্য। যার একটি তৈরি করেছে ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), অন্যটি তৈরি করেছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল)। তবে এখনও কেউ গ্যাসের প্রি- পেইড মিটার তৈরির কারখানা নির্মাণে এগিয়ে আসেনি। সূত্র মতে, গ্যাসের মোট গ্রাহক ৪৩ লাখের মধ্যে তিন লাখের মতো গ্রাহকের প্রি-পেইড মিটার রয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে সরকার মাত্র পৌনে তিন লাখ গ্রাহককে প্রি পেইড মিটার দিতে পেরেছে। বাকি আছেন আরো প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক। সরকার নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ায় আবাসিকে নতুন প্রি পেইড মিটার ৪০ লাখের মধ্যেই সীমিত থাকবে। সূত্র জানায়, গ্যাসের ক্ষেত্রে দুই চুলার একজন গ্রাহক প্রতিমাসে এখন ৯৭৫ টাকা বিল পরিশোধ করেন। কিন্তু এর বিপরীতে প্রি-পেইড মিটার যারা ব্যবহার করছেন, তাদের বিল আসছে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা। ফলে একজন গ্রাহক প্রতিমাসে ৫০০ টাকার মত প্রি-পেইড মিটারে সাশ্রয় করতে পারবেন।
অন্যদিকে সারা দেশে বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা তিন কোটি ৫৭ লাখ। আর সেচ গ্রাহক রয়েছেন তিন লাখ ৬৪ হাজার। অন্যদিকে, গ্যাসের গৃহস্থালি সংযোগ রয়েছে ৪৩ লাখ। গ্যাসে সংযোগ বন্ধ থাকলেও বিদ্যুতে নতুন নতুন সংযোগ হচ্ছে। একই মিটার কারখানা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মিটার তৈরির বড় বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। একটি মিটার সাধারণত ১০ বছর চলে। তবে কোনো কোনো মিটার আরো আগেও অকেজো হয়ে যায়। খোলা বাজারে কীভাবে এই মিটার বাণিজ্য সমপ্রসারণ করা হবে জানতে চাইলে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মিটার কেমন হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যে কোম্পানিই মিটার তৈরি করবে, তাদের মিটারে নির্ধারিত বিষয়গুলো থাকতে হবে। এই মিটারগুলো নির্ধারিত পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করতে হবে। সময়ে সময়ে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্রও নিতে হবে। এক্ষেত্রে গ্যাসের হলে পেট্রোবাংলা আর বিদ্যুতের হলে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। গ্রাহকের ?সুবিধা কী জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বলেন, গ্রাহক ব্যবহারের মাঝখানেই বিল দেখবেন। তিনি দেখতে পাবেন কতটুকু ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে গ্রাহক নিজেই হিসাব করে বিদ্যুৎ-গ্যাস ব্যবহার করবেন। এক্ষেত্রে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো বকেয়া থাকবে না। এতে সিস্টেম লস কমে এসে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। প্রচলিত প্রি পেইড মিটারের চেয়ে বিদ্যুতে আরো আধুনিক স্মার্ট প্রি পেইড মিটার এসেছে বাজারে। এই প্রি পেইড মিটার দেশের একটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ‘ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ব্যবহার করছে। স্মার্ট মিটারে মোবাইল ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহার দেখা যায়। এই ব্যবস্থায় বিতরণ কোম্পানি সার্ভিস সেন্টারে বসেই রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে। আবার গ্রাহকও তার সমস্যার কথা মোবাইল অ্যাপসে গিয়ে বিতরণ কোম্পানিকে জানাতে পারবেন।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)-এর নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এটিএম হারুন অর রশিদ বলেন, ঢাকায় আমাদের গ্রাহক প্রায় ১৩ লাখ। এরমধ্যে প্রায় চার লাখ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করছেন। বেসরকারিভাবে যারা প্রি- পেইড মিটার দেবেন তাদের নীতিমালার আলোকে আসতে হবে। আর গ্রাহকরা যখন নিজের মত করে বাজার থেকে এই মিটার কিনে লাগাবেন তখন তাদের কাছ থেকে মিটার ভাড়া নেয়া হবে না। বিদ্যুৎ বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন এই বিষয়ে বলেন, বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার বেসরকারি করণের বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সরকারিভাবে তারাও প্রি-পেইড মিটার তৈরির জন্য একটি কারখানা করেছেন। প্রি-পেইড মিটারের প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ ভালো বলে তিনি মন্তব্য করেন।