যশোরে নকল প্রসাধনীর রমরমা ব্যবসা

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ কোনো ক্রিম শরীরের রং ফর্সা না করলেও দেদারসে যশোরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে অসংখ্য কোম্পানির তৈরি ফেয়ারনেস ক্রিম। শুধু তাই নয়, নকল প্রসাধনীর ব্যবসাও চলছে রমরমা। তরুণীদের ফর্সা হওয়ার আগ্রহের দিকে লক্ষ্য রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল এবং নিম্নমানের প্রসাধনী বিক্রি করে প্রচুর টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। চর্ম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো ক্রিমই রং ফর্সা করতে পারে না। ভালো ব্র্যান্ড ও ভালো মানের প্রসাধনী বিক্রেতাদের অভিযোগ, অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায় বলে নিম্নমাণের এসব প্রসাধনীর নতুন নতুন দোকান গড়ে উঠেছে বড় বাজার ও চুড়িপট্টিতে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চর্ম ও এলার্জি বিশেষঞ্জ ডা. তৌহিদুর রহমান লোকসমাজকে বলেন, কোনো প্রসাধনী শরীরের রং ফর্সা করে না। এমনকি কোনো রং ফর্সা করা ক্রিমও হতে পারে না। আসলে ফেয়ারনেস ক্রিম বলে কিছু নেই। এসব ক্রিমে হাইপোটেন্ট স্টেরয়েড অথবা স্টেরয়েড আছে। ব্যবহার করলে শরীরের রং ফর্সা অর্থাৎ সাদা দেখা যায়। তিনি বলেন, বাজারে ভারতীয় পণ্য বেটনোভেট-সি স্কিন ক্রিমে স্টেরয়েড আছে। এছাড়া এসব ক্রিমে পারদ থাকে যা থেকে ক্যান্সার হতে পারে। ফেয়ারনেস, হোয়াইটেনিং, ব্রাইটেনিং, স্কিন কেয়ার প্রসাধনী ব্যবহার করলে চামড়া পাতলা করে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এসব প্রসাধনী ব্যবহার করে রোদে গেলে ত্বক লাল হয়ে যায়। মুখে অবাঞ্ছিত লোম গজায়। ত্বকে ফুঁসকুড়ি হয়, চুলকানি হয় এবং জ¦ালাপোড়া করে, এলার্জি হয়, দগদগে ঘাও হতে পারে। তবে তিনি বলেন, ভালো ব্র্যান্ডের ময়েশ্চরাইজার ক্রিম ও সানস্কিন ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে শরীরের রং ফর্সার জন্য নয়, ত্বক মসৃণ ও রোদের রশ্মি থেকে রক্ষা করার জন্য। তাছাড়া হেলদি শপ থেকে এসব পণ্য কেনা ভালো।
ডা. তৌহিদুর রহমান আরও বলেন, মানুষের ত্বকে মেলানিন নামক এক ধরনের পদার্থ আছে। যা ত্বকের রং নির্ধারণ করে। যার শরীরে মেলানিনের পরিমাণ যত বেশি, তার ত্বক তত কালো। আর কম হলে রং ফর্সা হয়। এ মেলানিন কমানোর চিকিৎসা বা ওষুধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। তাছাড়া কেউ দাবিও করেনি যে, ত্বক ফর্সা করার ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। তবে ত্বক উজ্জ্বল করা যায়। আর বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ফেয়ারনেস ক্রিমে শরীরের রং ফর্সা হলে সবার আগে আফ্রিকার কালো মানুষরা এগুলো ব্যবহার করতো। এদিকে তরুণীদের ফর্সা হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করে যশোরের বড় বাজারে নতুন নতুন প্রসাধনীর দোকান গড়ে উঠেছে। হাটখোলা রোডের আলুপট্টিতে কাঁচামালের ব্যবসা গুটিয়ে অনেকে প্রসাধনীর দোকান দিয়ে বসেছেন। আলুপট্টি, ফেন্সি মার্কেট ও হাটচান্নির ৫ নম্বর, ৬ নম্বর গলিতে বিভিন্ন দোকানে নিম্নমাণের ও নকল প্রসাধনী বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভালো ব্র্যান্ডের প্রসাধনী বিক্রেতা জানান, বড় বাজারে চোরাচালানীদের মাধ্যমে ভারতীয় নিম্নমাণ ও নকল প্রসাধনী এনে অসাধু দোকানিরা এসব বিক্রি করছেন। এমনকি চুড়িপট্টিতেও কিছু কিছু দোকানে নকল প্রসাধনী পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার মৌলভীবাজার, চকবাজার, জিঞ্জিরা ও নারায়ণগঞ্জে তৈরি দেশি, পাকিস্তানি, দুবাই ও চায়না কোম্পানির নামে নকল প্রসাধনী দেদারছে সামান্য দামে কিনে এনে বাজার মূল্যে বিক্রি করে অল্প সময়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বড় বাজারে তরুণীদের চাহিদামত শরীরের রং ফর্সাকারী পাকিস্তানি ক্রিম চাঁদনি, গৌরি, ডিউ, ভারতীয় বেটনোভেট-সি ও এন, ক্লোবজি, স্কিনলাইট, চীনা ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, দুবাই ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, বডি স্প্রে, বডি লোশন, পারফিউম, মেকআপ বক্স প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য ছাড়াও দেশি অনেক প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে যাতে কোনো বিএসটিআই’র সিল নেই। আবার দেশি অনেক নকল পণ্যেও ভুয়া বিএসটিআই’র সিল মারা আছে। যা ধরা সম্ভব হয় না। তবে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা ঠিকই বুঝতে পারেন চিকিৎসা নিতে আসা নকল প্রসাধনী ব্যবহারকারী তরুণীদের ত্বক দেখে। বৈধ ব্যবসায়ীদের দাবি, নকল ও নিম্নমাণের প্রসাধনী ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। যাতে করে তরুণীরা শারীরিক বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়।