ফসলের মাঠে বীজ বুনে প্রেমপত্র আঁকলেন কৃষক

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় শৈল্পিক বুননে বীজ বপন করে ফসলের মাঠকে ক্যানভাস করে প্রেমপত্র এঁকে সকলের নজর কেড়েছেন কৃষক আব্দুল কাদির (৪০)। আব্দুল কাদির ৩৫ শতক জমিতে ভালোবাসার নিদর্শন উপস্থাপন করেছেন। তার এই সৃষ্টিশীলতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর পাশাপাশি বাইরে থেকেও অনেকে দৃষ্টিনন্দন ফসলের খেতটি দেখতে আসছেন।
সরেজমিন মাঠে গিয়ে কৃষক কাদিরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, গ্রামে একটি ‘বন্ধুমহল’ নামে ক্লাব আছে। তিনি সেই ক্লাবের উপদেষ্টা সদস্য। ক্লাবের সদস্যরা তার কাছে নতুন কিছু করে দেখানো প্রস্তাব দিলে তিনি স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া রবি শস্য সরিষার প্রদর্শনী প্লটে চিত্রকলার আলোকে বীজ বপন করার চিন্তা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্লাবের সদস্যদের সহায়তায় ৩৫শতক জমিতে হাল চাষ করে জমির বুকে চিত্রাঙ্কন করেন। তারপর চিত্ররেখার মাঝে বারী-১৫ জাতের সরিষা বীজ বপন করেন। জমিতে সেই বীজ গজানোর পর পুরো খেত যেন জীবন্ত ছবির রূপ ধারণ করে। ‘বন্ধুমহল’ ক্লাবের সদস্যরা খেতের নাম দিয়েছেন ‘নকশি কাঁথার মাঠ’। খেত ঘুরে দেখা যায় দুপাশে রয়েছে দুটি নৌকা, জাতীয় ফুল শাপলা, চার কোণে চারটি লাভ চিহ্ন এবং খেতের মধ্যখানে একটি বড় লাভ চিহ্ন। যার ভেতরে রয়েছে কৃষক আব্দুল কাদিরের নাম।
খেতের চার কোণে ও মধ্য ভাগে লাভ চিহ্ন আঁকার ব্যাপারে কাদির বলেন, ‘এর পেছনে একটি মজার গল্প রয়েছে। কিশোর বয়সে উপজেলার সোহাগী গ্রামের এক কিশোরীর প্রেমে পড়েছিলাম। তখন চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতাম আমরা। প্রেমিকা আমাকে যখন চিঠি লিখত তখন চিঠির চার কোণে চারটি এবং মাঝখানে একটি বড় লাভ চিহ্ন এঁকে দিত। লাভ চিহ্নের ভেতরে লেখা থাকত প্রেমিকা ও আমার নাম। কিশোর বয়সের সেই স্মৃতিকে ফসলের জমিতে ফুটিয়ে তুলে ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখালাম। তিনি জানান, আমার প্রেমিকার নাম মকসুদা বেগম। ভালোবেসে তাকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছি। আমাদের সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। মাকসুদা আমার কাছে মমতাজের মতো। সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ পৃথিবী বিখ্যাত সুরম্য তাজমহল তৈরি করেছিলেন। আমি গরিব, আমার সামর্থ্য নেই, কিন্তু আমার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই। তাই তাজমহল বানাতে না পারলেও জমিতে প্রেমের নিদর্শন হিসেবে প্রেয়সীকে লেখা চিঠির মতোই নিজের জমিতে প্রেমপত্র এঁকেছি।’