২০ হাজার মানুষের ভরসা যে পানির প্লান্ট

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ বাগেরহাটে একমাত্র প্লান্ট থেকে সুপেয় পানির সুবিধা পাচ্ছে অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ২০ হাজার মানুষ। দশ বছর ধরে নিয়মিত সুপেয় পানি ব্যবহার করতে পেরে খুশি তারা। এভাবে টেকসই আরও প্লান্ট স্থাপন করে পানির চাহিদা মেটানোর দাবি কচুয়া উপজেলাবাসীর। অনুরূপ সকল উপজেলা পর্যায়ে পানির প্লান্ট স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কচুয়া উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে কচুয়া উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পানি শোধনাগার ও ট্যাংকি স্থাপন করা হয়। প্রতি ঘন্টায় ৩০ হাজার লিটার পানি শোধন করার সক্ষমতা রয়েছে এই প্লান্টের। নির্মান শেষে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয় প্লান্টটিকে। প্লান্ট ব্যবস্থাপনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন দেড় লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা হয় এই প্লান্ট থেকে। প্রায় ৫ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন থেকে পানি দেওয়া হয় উপকারভোগীদের। ৩৯০টি আবাসিক সংযোগ, বেশকিছু হোটেল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই প্লান্টের পানি খাবার ও রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। যারা নির্দিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে পরিমান ফি প্রদান করেন এই পানির জন্য। এছাড়া বিনামূল্যে কলস ও বোতল ভরে পানি নিয়ে ব্যবহার করেন অনেকে। এই প্লান্ট দেখ ভাল এবং বিল সরবরাহের জন্য তিনজন কর্মচারী রয়েছেন। যারা নিয়মিত পানির ট্যাংকি ও শোধনাগার পরিস্কার করেন। সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নিয়মিত তদারকিও করে থাকেন। তবে এই সুপেয় পানির চাহিদা পূরণের জন্য আরও ট্যাংকি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম বুলু বলেন, একটা সময় কচুয়ায় পানির খুব সংকট ছিল। যার কারণে আমাদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হত। কিন্তু এখন ঘরে বসেই পানযোগ্য সাপ্লাইয়ের পানি পাই। মাসে সামান্য কিছু টাকা দিলেই হয়। এই পানি সরবরাহের ফলে আমাদের জীবন যাত্রা সহজ হয়েছে। কচুয়া বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদের মধ্য থেকে যে সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে যে পানি দেয়,এর মান খুবই ভাল। এই পানি-ই আমরা খাই। কচুয়া বাজারের মীর হোটেল এ্যান্ড রেষ্টুরেন্টের প্রোপাইটর মীর আল আমিন বলেন, আমাদের হোটেলসহ বেশ কয়েকটি হোটেলে সাপ্লাইয়ের পানি খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাস্টমাররাে এই পানি খেয়ে খুশি। কারও কোন অভিযোগ নেই।
পাম্প অপারেটর বাবুল কোটাল বলেন, আমরা তিন জন এই পাম্পের দেখা শুনা করি। প্রতি ১৫ দিন পরপর প্লান্ট ও বালু পরিস্কার করি। সময়মত পানি সরবরাহ এবং পানি ওঠানোর কাজ করি আমরা। পানি সঠিক রাখতে আমরা সব সময় গুরুত্বের সাথে কাজ করি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কচুয়ার উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ রায়হান হোসেন বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং শুস্ক মৌসুমে খালের পানি ব্যবহার করা হয় এই ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। প্রথমে পানি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের রিজার্ভ ট্যাংকিতে নেওয়া হয়, পরে স্যান্ড ফিল্টেশনের মাধ্যমে ক্লিয়ার ওয়াটার ট্যাংকিতে যায়। পরে সার্ভিস ট্যাংকিতে যায়। সার্ভিস ট্যাংকি থেকে সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌছে যায় আমাদের এই সুপেয় পানি। বর্তমানে প্রতিদিন দেড় লক্ষ লিটার পানি সরবরাহ করা হয় এই প্লান্ট থেকে। স্থানীয়দের আরও চাহিদা রয়েছে বলে জানান তিনি। কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা: তাসমিনা খাতুন বলেন, এই প্লান্ট থেকে আরও বেশি উৎপাদন ক্ষমতা থাকলে গরীব অসহায় মানুষ উপকৃত হতো বলে জানান প্লান্ট থেকে নাম মাত্র মূল্যে কচুয়া উপজেলা সদর ও পাশ্ববর্তী এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। তেমনি বিনামূল্যেও অনেকে প্লান্টের পাশের ট্যাব থেকে পানি নেন। কেউ কেউ এই প্লান্ট থেকে পানি নিয়ে, বাজারে খাবার হোটেল মালিকদের কাছে বিক্রিও করেন। এরপরেও উপজেলায় আরও পানির চাহিদা রয়েছে। আরও একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হলে, আরও বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া যেত। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় বাগেরহাটের প্রতিটি উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করায় কচুয়া উপজেলা সদরে পানির সংকট অনেক কম। কচুয়া উপজেলাকে অনুসরণ করে অন্যান্য উপজেলায়ও এই ধরনের টেকসই পান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে চিতলমারী উপজেলায় প্লান্টের কাজ শুরু হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায়ও দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।