সুপ্রিম কোর্টের ভেতর সাংবাদিক আইনজীবীদের পেটাল পুলিশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবী মারধরের শিকার হয়েছেন। সেখানে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকসহ আইনজীবীদের রাইফেল, লাঠি ও মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে পুলিশ পিটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের মারতে মারতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনের (ভোটকেন্দ্র) ভেতরে  বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সাংবাদিকেরা জানান, সংবাদ সংগ্রহের জন্য সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামের ভেতর ভোটকেন্দ্রে গেলে পুলিশ অর্তকিতভাবে হামলা করে। বুট দিয়ে লাথি মেরে, লাঠিপেটা, কিলঘুষি মেরে, ফ্লোরে ফেলে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হয়। এ সময় এটিএন নিউজের জাভেদ আক্তার, আজকের পত্রিকার এসএম নূর মোহাম্মদ, মানবজমিনের আব্দুল্লাহ আল মারুফ, জাগোনিউজের ফজলুল হক মৃধা, বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম, সময় টিভির ক্যামেরাপার্সন সোলাইমান স্বপন আহত হন। এ ছাড়া নারী আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবীও আহত হয়েছেন। সাংবাদিক জাভেদ আক্তারকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।
ল রিপোর্টার্স ফোরামের নেতৃবৃন্দ জানান, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
একজন সাংবাদিক বলেন, আমি দুজনকে অনুরোধ করেছি, ভাই আমি সাংবাদিক, নিউজ করার জন্য এসেছি। ওই সময় আমাকে অন্তত ১০টি লাথি-ঘুসি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমাকে ফেলে দিয়ে কলার ধরে উঠিয়ে আবার ফেলে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে আমাকে চড়থাপ্পড়ও দেওয়া হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুসারে, সমিতির দুই দিনব্যাপী এ নির্বাচন  বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার ( ১৬ মার্চ ) হওয়ার কথা।বুধবার  সকাল ১০টায় ভোট গ্রহণ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে সকাল থেকেই সমিতির মিলনায়তনের ভেতরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে কথা-কথাকাটাকাটি হয়।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ‘গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তির অধীনে নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে ভোটকেন্দ্রে বিক্ষোভ করেন।
এ সময় পুলিশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গেটের প্রধান ফটকের কলাপসিবল গেট আটকে দেয়। অন্যদিকে বাইরে থেকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা গেট খোলার দাবিতে গেটে ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে।
একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের হট্টগোল হয়। তারা বার ভবনের নিচ তলা ও বারান্দায় স্লোগান দিতে থাকেন।
আলাউদ্দিন খালিদ নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী ভোট দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, টাঙ্গাইল থেকে এসেছি ভোট দিতে। কিন্তু ভোট দিতে পারিনি। আগে তো কখনও এমন হয়নি।
ভোট শুরুর আগের দিন মঙ্গলবার ভোটকে কেন্দ্র করে দিনভর হট্টগোল হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করার পর দু’পক্ষের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকাল ৭টা থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রাঙ্গণে শত শত পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়া সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য।
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। দায়িত্ব পালনের সময় সবার সতর্ক হওয়া উচিত। এসময় তিনি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন।
গতকাল দুপুরে প্রধান বিচারপতির দপ্তরে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতির নেতৃত্বে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদল অভিযোগ জানাতে গেলে তিনি এ আশ্বাস দেন। এসময় প্রধান বিচারপতি হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকার, সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ সরওয়ার হোসেন ভুঞা, সহ-সভাপতি দিদারুল আলম দিদার, সাবেক সভাপতি এম বদিজ্জামান ও সাবেক সভাপতি ওয়াকিল আহমেদ হিরন। এসময় আপিল বিভাগের সব বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন।

 

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments