সংশোধিত ফলাফলের অপেক্ষায় থেকে হতাশ শিশু ও অভিভাবকরা

0

 

আকরামুজ্জামান॥ ঘোষণা দেওয়ার পরও  বুধবার প্রাথমিকের বৃত্তির সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। আগের দিন মঙ্গলবার দুপুরে প্রাথমিকের বৃত্তির ফলাফল প্রকাশের চার ঘণ্টার ব্যবধানে কারিগরি ত্রুটির কথা বলে ফলাফল স্থগিত করা হয়। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় স্থগিত হওয়া ফলাফল পুনঃযাচাইয়ের পর বুধবার সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
তবে  বুধবার দিনভর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ফলাফলের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি। কবে নাগাদ সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ হবে সে বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি এদিন। এতে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কিছু জানাতে পারেনি।
১৩ বছর পর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করে অনেকটা ঘটা করে। শিক্ষা বর্ষের শেষ সময়ে এসে সরকারের এ সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা অনেকটা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে থাকলেও তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়।
জেলা প্রাথমিক অফিস সূত্রে জানা গেছে যশোরের আট উপজেলায় সর্বমোট ৮ হাজার ৫৩১ জন পরীক্ষার্থী নির্বাচিত হয় বৃত্তি পরীক্ষার জন্য। এদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৮ হাজার ৩৮৮ জন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অভয়নগর উপজেলায় ৬৯১, কেশবপুরে ৭৭৭, চৌগাছায় ৮৫৪, ঝিকরগাছায় ১ হাজার ১০, বাঘারপাড়ায় ৫৯৫, মণিরামপুরে ১ হাজার ১৬৬, শার্শায় ১ হাজার ৪৭ ও সদর উপজেলায় ২ হাজার ২৪৮ জন ছিল।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ও পরে স্থগিত হওয়া ফলাফলে দেখা যায় উপর্যুক্ত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ৫৫৮ জন বৃত্তি পেয়েছে। তার মধ্যে ছিল ট্যালেন্টপুলে ৫৬০ ও সাধারণে ৯৯৮ জন। এরমধ্যে অভয়নগরে ট্যালেন্টপুলে ৪৭ ও সাধারণ ১০৩, কেশবপুরে ট্যালেন্টপুলে ৫২ ও সাধারণ ১২১, চৌগাছায় ট্যালেন্টপুলে ৫৭ ও সাধারণ ১২১, ঝিকরগাছায় ট্যালেন্টপুলে ৬৭ ও সাধারণ ১২১, বাঘারপাড়ায় ট্যালেন্টপুলে ৩৯ ও সাধারণ ১০৯, মণিরামপুরে ট্যালেন্টপুলে ৭৮ ও সাধারণ ১৫৭, শার্শায় ট্যালেন্টপুলে ৬৯ ও সাধারণ ১২১ এবং সদর উপজেলায় ট্যালেন্টপুলে ১৫১ ও সাধারণ ১৪৫ জন রয়েছে। মঙ্গলবার ফলাফল প্রকাশের পর থেকে এসব শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। সাথে অভিভাবকরাও। অনেকে ফলাফলের সুখবর সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশের জন্যও পত্রিকার দপ্তরে যোগাযোগ করে। কিন্তু চার ঘণ্টার ব্যবধানে ঘোষণা আসে স্থগিতের খবর। এতে হতাশায় মুষড়ে পড়ে এসব কৃতী শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা। গতকাল তারা সংশোধিত ফলাফলের জন্য উদগ্রীব হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাও হলো না। দিনভর শিক্ষা অফিস আর ওয়েবসাইট সার্চ করেও তারা কোনো ফলাফল পায়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ক্ষোভ শিশুদের সাথে এমন আচরণ করাটা ঠিক হচ্ছে না। লোন অফিসপাড়ার বাসিন্দা সরকারি চাকুরিজীবী পারভীন আকতার বলেন, তার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মাওয়া যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। মঙ্গলবার ফলাফলের পর থেকে সে আনন্দের মধ্যে থাকলেও ফল স্থগিতের পর থেকে অনেকটা নীরব হয়ে যায়। বুধবার রেজাল্টের অপেক্ষায় সে সারা দিনই বিচলিত ছিলো। কিন্তু রেজাল্ট না পেয়ে অনেকটা ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, ওয়েবসাইটে ফলাফল আপলোড করার আগে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করা উচিৎ ছিলো। এর কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর সূদুর প্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সমূহ আশঙ্কা তৈরি হলো।
প্রায় একই কথা বলেন আমিনুর রহমান নামে আরেক অভিভাবক। তিনি বলেন, সংশোধিত ফলাফলে কোনো শিক্ষার্থী যদি তার অবস্থান থেকে ছিটকে পড়ে তার কী অবস্থা হবে সেটি ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আমার মেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার পর আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্খীদের বাড়ি বাড়ি মিষ্টি পাঠিয়েছি। এখন যদি সংশোধিত ফলাফলে সে বাদ পড়ে তাকে কী জবাব দেবো। আমরাও কীভাবে মুখ দেখাবো। তিনি বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষ মন্ত্রণালয় ভুল রেজাল্ট ওয়েবসাইটে দিয়ে যেমন দায়িত্তহীনতার পরিচয় দিয়েছে ঠিক তেমনি সংশোধিত রেজাল্ট দেয়ার বিষয়েও তাই করছে। এতে আমাদের সন্তানদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।
সংশোধিত ফলাফলের বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, রেজাল্টের অপেক্ষায় আমরাও মেইল খুলে বসে আছি। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো খবর আসেনি। তিনি বলেন, সংশোধিত রেজাল্ট আজ দেয়ার কথা থাকলেও তা কখন দেবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে যতটুকু জেনেছি মঙ্গলবারের প্রকাশিত ফলাফল পুনঃযাচাইয়ের পর মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হতে পারে।