যশোরে অসচ্ছল দরিদ্র মানুষরা টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন

0

আকরামুজ্জামান ॥ সুলাইমান হোসেন, যশোর সদরের চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ডাকাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা। যশোর শহরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে স্ত্রী, তিন সন্তান নিয়ে সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই প্রয়োজন মনে করছেন টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের। কিন্তু দুই মাস ধরে তিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে বার বার ধর্না দিয়েও কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।
একই অবস্থা ওই গ্রামের নূর ইসলামেরও। স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি। খরচ সাশ্রয়ে টিসিবি পণ্যের ফ্যামিলি কার্ডের জন্য তিনিও নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, কোনো পাত্তা দিচ্ছেন নেতারা।
তাদের অভিযোগ, তাদের মতো অসচ্ছল লোকেরা টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড না পেলেও বরাদ্দের সিংহভাগ কার্ডই বাগিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দলের পছন্দের লোকজনদের স্বজনরা। তাদের পছন্দের লোকজনদের নাম দিয়ে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যেকারণে তালিকায় অসচ্ছল দরিদ্ররাই বেশি বাদ পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক ৬০ টাকা দরে এক কেজি চিনি, ১১০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল ও ৭০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুরির ডাল বিক্রি করার কর্মসূচি সারাদেশের মতো যশোরেও চালু রয়েছে। জেলার ৭৩ জন ডিলার এসব মালামাল তুলে নির্দিষ্ট কার্ডধারীদের মাঝে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করে আসছে। যশোরের আট উপজেলায় এর সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৩৯ জন।
তবে  বৃহস্পকিবার ( ৯ মার্চ ) থেকে ৫ পণ্য নিয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। একজন কার্ডধারী ৬০ টাকা দরে এক কেজি চিনি, প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ ২ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল, ৫০ টাকা দরে এক কেজি ছোলা ও ১০০ টাকা দরে এক কজি খেজুর কিনতে পারবেন। তবে খেজুর শুধুমাত্র ঢাকা সিটি করপোরেশনে বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিনে যশোরে শুধুমাত্র চৌগাছা উপজেলায় টিসিবির ৪ পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতে রোজার আগেই বিক্রি করা হবে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তবে রমজানকে সামনে রেখে টিসিবি পণ্য বিক্রির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও যশোরের অধিকাংশ জায়গাতেই প্রকৃত অনেক উপকারভোগী বাদ পড়েছেন। দলীয় রাজনৈতিক বিষয়ে তালিকাভুক্তির কারণে সমাজের অনেক অসচ্ছল দরিদ্র মানুষ টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
যশোর জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, উপকারভোগী বাছাইয়ের লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তিন পৃথক কমিটি কাজ করে । এরমধ্যে গ্রাম পর্যায়ে প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজটি করে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে গঠিত কমিটি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কমিটি স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে সুপারিশকৃতদের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করেছে। সবশেষে চূড়ান্ত বাছাই হয়েছে জেলা পর্যায়ে। এখানে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন কমিটির সন্তুষ্টিতে তালিকা অনুমোদন পেয়েছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে জেলা ও উপজেলা ও ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে যেসব চেয়ারম্যান, মেম্বাররা প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেছে তারা সবাই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের লোক। একারণে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তালিকা হওয়ায় অনেক সচ্ছল লোক এ তালিকায় আসলেও অনেক অসচ্ছল লোক বাদ পড়েছেন।
তবে এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মুহাম্মাদ রিজিবুল ইসলাম বলেন, টিসিবির জন্য যে ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করা হয়েছে তা শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা সুবিধা পাওয়ার মতো যোগ্য তাদেরকে ইচ্ছা করলেই আমরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি না। এটি সরকারের নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে আগামীতে যদি কার্ডের সংখ্যা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয় তাহলে অবশ্যই তালিকার বাইরে থাকা প্রকৃত অসচ্ছলদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।