যশোরের লালদিঘির পাড়ে পার্কিংয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চাঁদাবাজি

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী লাল দিঘির পাড়স্থ রাজু মঞ্চের পেছনের জায়গায় পার্কিংয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চাঁদাবাজি করছে এক দল যুবক। অনুমোদন না নিয়ে জায়গা দখল করে পার্কিংয়ের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে পৌরসভার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে ফিরে এসেছেন। চাঁদাবাজরা নিজেদের পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমনের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।
লাল দিঘির পাড় এলাকার ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, স্থানটির উন্নয়ন সাধন করে পথচারীদের চলাচল ও সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে এসে অবস্থান নেন। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু যুবক পার্কিংয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে এখানে আসা মোটরসাইকেল চালকদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ২০ টাকা আর সামান্য ভারি যানবহন চালকদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকায় আদায় করছে। তাদের নেতৃত্বে রয়েছে নাহিদ নামে এক যুবক।
এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে ওই স্থানটি পার্কিংয়ের জন্য কাউকে দেওয়া হয়নি। এভাবে দেওয়ার কোন বিধান নেই। বিশেষ করে ওই জায়গায় পার্কিংয়ের স্থান করার প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ এভাবে পার্কিং বসিয়ে টাকা আদায় করে থাকে তাহলে সেটি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং পেশি শক্তির প্রয়োগ ছাড়া আর কিছু না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজু মঞ্চের পেছনে রেলিংয়ে ঝুলছে সাইনবোর্ড । তাতে বড় করে লেখা আছে পার্কিং জোন। তার নিচে লেখা আছে সড়ক আইন মেনে চলুন, পার্কিং জোনে গাড়ি পার্কিং করুন, যশোর শহর যানজট মুক্ত রাখুন। জায়গা টির দুই পাশ দড়ি দিয়ে ঘেরা এবং এক পাশ লোহার ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা। বাকি অংশ প্রবেশ পথ। তার পাশে চেয়ার টেবিল বসানো আছে। একজন কাগজ কলমে টাকা আদায়ের হিসাব নিকাশের দায়িত্ব পালন করছে। এর বাইরে কেউ টোকেন হাতে,কেউ বা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছে। কেউ লালদিঘি এলাকায় মোটরসাইকেল কিংবা ছোটখাটো যানবাহন নিয়ে দাঁড়ানোর সাথে সাথে তাদেরকে পার্কিংয়ে যানবাহন রাখতে বাধ্য করছে। অন্যথায় তাদের মারমুখি আচরণের শিকার হচ্ছেন চালকরা। এমনকি সামান্য প্রয়োজনেও কেউ মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বললেও তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। আবার কেউ রাজু মঞ্চ থেকে দুরে কোথাও গাড়ি রাখলেও সেখানেও গিয়ে তারা চালকদের বিভ্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল চালকদের কাছ থেকে ২০ টাকা সময় ভেদে আরও বেশি। হালকা ও ভারী যান বাহন চালকদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সময় ভেদে এর চেয়ে বেশি টাকা আদায় করছে।
এদিকে এ অবস্থার কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন লাল দিঘি পাড়ের ব্যবসায়ীরা । তারা জানান, দোকানের মালামাল বোঝাই যানবাহন আসামাত্রই পার্কিংয়ের নামের চোরপূর্বক চাঁদা আদায়কারীরা এসে গাড়ি চালককের সাথে মারমুখি আচরণ শুরু করছে। তারা রীতিমত হুমকি দিয়ে বলছে, এখানে গাড়ি রাখা যাবে না। পার্কিংয়ের মধ্যে রাখতে হবে। এমনকি অনেক চালক তাদের হাতে মারধরের শিকার হচ্ছেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি লাল দিঘির পশ্চিম পাশের সড়কে প্রবেশ করতেই পার্কিংয়ের লোকজন গিয়ে চালকের সাথে মারমুখি আচরণ শুরু করে দেয়। ওই গাড়ির চালক কিছু বলা মাত্রই তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারপিট করে। এভাবে দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত লাল দিঘি পাড় এলাকায় কোন মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত মাইক্রোবাস, কিংবা পণ্যবাহী যানবাহন যাওয়া মাত্রই চালকরা তাদের মারমুখি আচরণের শিকার হচ্ছেন। এদিকে গতকাল বুধবার বেলা ১২টার কিছু সময় পর পৌর কতৃপক্ষের একজন তাদের সাথে পার্কিংয়ের বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা হাজী সুমন ভাইয়ের লোক। কিছু জানার থাকলে ভাইয়ের কাছে যান।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র হায়দার গণি পলাশের বক্তব্য নেওয়ার জন্য এই প্রতিবেদক তার দফতরে যান। কিন্তু ওই সময় তাকে দফতরে পাওয়া যায়নি। পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু বলেন, রাজু মঞ্চের পেছনের অংশের জায়গা তো পৌরবাসীর চলাচলের জন্য। তাছাড়া ওই ফাঁকা স্থানে জরুরি প্রয়োজনে মানুষ যানবহন রাখবে এটাই স্বাভাবিক। এতে যদি কোন অসুবিধা হয় সেটি ট্রাফিক বিভাগ দেখবে। এই জায়গ তো কারও পার্কিংয়ের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি। যদি কেউ পার্কিংয়ের নামে যানবহন রেখে টাকায় আদায় করে থাকে তাহলে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমি বলব এভাবে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলেও সেটি জুলুম করে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে পৌর কাউন্সিল আলমগীর কবির সুমনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।