লোকসমাজ ডেস্ক॥ এশিয়ার চালের বাজারে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। সর্বশেষ সপ্তাহে ভারত ও থাইল্যান্ডে রফতানিযোগ্য চালের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। করোনাকালে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া ও রফতানি চাহিদা বাড়তির দিকে থাকায় এ দুই দেশে রফতানিযোগ্য চালের দাম চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তবে একই সময়ে ভিয়েতনামে খাদ্যপণ্যটির দাম অপরিবর্তিত ছিল। খবর বিজনেস রেকর্ডার ও রয়টার্স।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রফতানিকারক দেশ। এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোয় ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি চাল রফতানি হয়। সর্বশেষ সপ্তাহে ভারতের বাজারে প্রতি টন রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল ৩৮৩-৩৮৯ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়েছে। আগের সপ্তাহেও ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৩৮২-৩৮৭ ডলারের মধ্যে। সেই হিসাবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ ডলার বেড়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারীর সময় ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোয়ও ভারতীয় চালের চাহিদা বাড়তির দিকে রয়েছে। তবে বাড়তি চাহিদার চাল সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর পেছনে বড় একটি কারণ করোনা সংক্রমণের কারণে বন্দরগুলোয় শ্রমিক সংকট। এর ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চাল রফতানি। তার পরও ভারতের বাজারে বাড়তে শুরু করেছে রফতানিযোগ্য চালের দাম।
এ বিষয়ে ভারতের জনপ্রিয় চালের ব্র্যান্ড ওলাম ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্তা বলেন, তুলনামূলক কম দাম ও ভালো মানের কারণে রফতানি বাজারে ভারতীয় চালের চাহিদা বেশি থাকে। তবে করোনাকালে দাম বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনগুলোয় খাদ্যপণ্যটির রফতানি বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
তবে ভারতীয় চাল রফতানিকারকরা বাংলাদেশের বাজার নিয়ে ক্রমেই আশাবাদী হয়ে উঠছেন। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এবার প্রায় এক লাখ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। প্রয়োজন হলে চাল আমদানি শুরু করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর জের ধরে ভারতীয় রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ চাল আমদানি করলে ভারত থেকে সড়ক কিংবা রেলপথে চাল পাঠানো সম্ভব হবে। এতে ভারত থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি বাড়তে পারে।
চাল রফতানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় থাইল্যান্ডের অবস্থান দ্বিতীয়। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির দাম চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এ সময় থাইল্যান্ডের বাজারে প্রতি টন রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল ৩৮০-৫০০ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়েছে। ২ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহের পর এটাই থাই চালের সর্বোচ্চ রফতানিমূল্য। আগের সপ্তাহেও দেশটির বাজারে রফতানিযোগ্য চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল টনপ্রতি ৪৬৫ ডলার। সেই হিসাবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে থাইল্যান্ডে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম টনপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫ ডলার বেড়েছে।
ব্যাংককভিত্তিক ট্রেডাররা জানান, থাইল্যান্ডে চালের চাহিদা অনেকটাই স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। তবে খরার কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এ হারে দাম বাড়লে আগামী দিনগুলোয় চাল আমদানিকারকরা থাইল্যান্ডের পরিবর্তে ভারত কিংবা ভিয়েতনামের প্রতি ঝুঁকতে পারেন বলে আশঙ্কা তাদের।
ভিয়েতনাম বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। সর্বশেষ সপ্তাহে দেশটির বাজারে প্রতি টন রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চালের দাম ৪৮০-৪৯০ ডলারে অপরিবর্তিত ছিল। তবে ২০১১ সালের পর এটাই ভিয়েতনামের বাজারে চালের সর্বোচ্চ রফতানিমূল্য।
দেশটির রফতানিকারকরা বলছেন, ভিয়েতনামে করোনা সংক্রমণ ফের ফিরে এসেছে। এরপর চালের বাজারে সরবরাহ আগের তুলনায় কমেছে। দেশটিতে গ্রীষ্ম ও শরত্কালীন শস্য সংগ্রহ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে বাড়তি চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ অনেকটাই কমে আসায় ভিয়েতনামে চালের রফতানিমূল্য ক্রমাগত বাড়তির দিকে রয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, অক্টোবর নাগাদ ভিয়েতনামের বাজারে নতুন চাল উঠবে। তার আগে দেশটির চালের বাজার তুলনামূলক চাঙ্গা থাকতে পারে।