ঝিকরগাছা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির অভিযোগ মেয়রের

0

 

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদের বিরুদ্ধে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেছেন ঝিকরগাছা পৌরসভার মেয়র ও একই দলের সহ-সভাপতি মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল। শুক্রবার (১৭ মার্চ) বেলা ১২টায় প্রেসক্লাব যশোরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, এ ঘটনায় তিনি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। অভিযোগ করেছেন ঝিকরগাছা থানায় । কিন্তু এখন পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় নিরাপত্তাহীনতার আশংকায় তার এ সংবাদ সম্মেনের আয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়রের সাথে পৌরসভার ১১ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। পৌর পরিষদের সিদ্ধান্তে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানান মেয়র।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র বলেন, গত ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে তিনি পৌরসভায় নিজ কার্যালয়ে ছিলেন। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ তার কক্ষে ঢুকে সেখানে উপস্থিত সবাইকে বের করে দেন। এরপর তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও বাইরে বের হলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।
মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, ‘তার (মুছা মাহমুদ) সাথে আমার দীর্ঘদিন কথাবার্তা বন্ধ রয়েছে। কারণ সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে ‘ জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে মুছা মাহমুদ গং নৌকার বিপক্ষে প্রকাশ্য নির্বাচন করে’।
তিনি বলেন, ‘আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়ায় পৌর পরিষদের প্যাডে ঝিকরগাছা থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করি। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ঢুকে একজন পৌর মেয়রকে হত্যার হুমকির পরও ঝিকরগাছা থানার ওসি আমার এজাহারটি গ্রহণ করলেও মামলা রেকর্ড করে নাই। এ বিষয়ে আমি ওসি সাহেব এর নিকট ফোন করলে তিনি উপরের নির্দেশের অপেক্ষা দেখান।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘আপনাদের কাছে প্রশ্ন হল- আওয়ামী লীগের পদে থাকলেই কি সে আইনের ঊর্দ্বে?’
কী কারণে হত্যার হুমকি- সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, ঝিকরগাছা পৌরসভার সাবেক বোটঘাট এলাকায় পাঁচ শতকের একটি সরকারি সম্পত্তি ডিসিআর না কেটেই মুছা মাহমুদের নেতৃত্বে ব্যক্তিস্বার্থে দখল করে নেয়া হয়েছে। এতদিন ওই জমির ওপরে থাকা ভবনে তালা দেয়া থাকলেও সেটা ১৫ মার্চ খোলা অবস্থায় দেখে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে কেউ ওই সম্পত্তির ডিসিআর কেটে নিয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। এর ঘণ্টা খানেক পরে এসে মুছা মাহমুদ আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যান।
তবে হুমকির বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন মুছা মাহমুদ। তার দাবি, ওই জমি আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত অফিসের। যুবলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেনসহ কয়েকজন অফিস খুললে পৌর মেয়র সেখানে গিয়ে তাদের গালিগালাজ করেন।
তিনি দাবি করেন সেখানে পৌর মেয়র ব্যক্তিগত অফিস বানাতে চান। এ বিষয় জানতে তিনি পৌরসভায় মেয়রের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্ত মেয়র পিস্তল বের করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। এসব বিষয় উল্লেখ করে তিনি ঘটনার পরদিন ১৬ মার্চ ঝিকরগাছা থানায় জিডি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, ওই সম্পত্তিতে আওয়ামী লীগের অফিস করার জন্যে তারাই চেষ্টা করছেন। ডিসিআর প্রাপ্তির জন্যে তিনিসহ স্থানীয় এমপি ডা. নাসির উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা রমজান শরীফ বাদশা যৌথ স্বাক্ষর করে আবেদন করেছেন। বরং মুছা মাহমুদ ওই ভবনটি ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে চান। এ তাকে দেয়া হত্যার হুমকির ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে তিনি তার বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে থানায় জিডি করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে মেয়র আরো বলেন, মুছা মাহমুদ আওয়ামী লীগের লেবাসধারী সন্ত্রাসী। ২০১০ সালে তিনি শার্শা থানার তৎকালীন ওসিকে পিটিয়েছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুছা মাহমুদের ক্যাডারদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বাপ্পী, মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, মেয়র ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মুছা মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক। আমরা উভয়ের কাছ থেকে ঘটনা শুনেছি। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ঝিকরগাছা থানার ওসি সুমন ভক্ত বলেন, ‘পৌর মেয়রের অভিযোগ পেয়েছি। দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments