চৌগাছায় তালের কদর বেড়েছে

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার হাটবাজারগুলোতে এ বছর গ্রীষ্মকালীন রসালো ফল তালের ব্যাপক সমারহ ঘটছে। কাঁচা তালের শাঁস শিশুসহ সব বয়সের মানুষের কাছে বেজায় পছন্দের। তাইতো হাট বাজারের ওলিগলি, সড়কের পাশে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তালের শাঁস বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে দাম নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়য়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
তাল অতি পরিচিত একটি ফল। এক সময় গ্রামাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত তাল গাছ। অবহেলা আর অযতেœ বাড়ির পাশে, ফসলি জমির আইলে, সড়কের পাশে ও পতিত জমিতে এমনি এমনি বেড়ে উঠে তাল গাছ। গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক তালগাছ থাকায় এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলতো বাবুই পাখির। তাল গাছই ছিলো বাবুই পাখির পছন্দের আবাসস্থল। সময়ের ব্যবধানে অনেকটাই বিলুপ্ত তালগাছ। আর বাবুই পাখি তো দেখাই যায় না। তাল গাছের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরে আবারও নতুন করে তাল গাছ রোপণ শুরু হয়েছে। বেশ আগে রোপণ করা গাছ এখন ফল দিতে শুরু করায় হাটবাজারগুলো কাঁচা তালে ভরে উঠেছে।
শুক্রবার (১৯ মে) সকাল ১১ টার দিকে চৌগাছার প্রধান বাজার ঘুরে দেখা যায় সড়কের পাশে বসে মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা তালের শাঁস বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চৌগাছা পারবাজারে ব্রিজ সংলগ্ন সড়কের পাশে তাল বিক্রি করছেন উপজেলার টেংগুরপুর গ্রামের জাকির হোসেন ও বেলেমাঠ গ্রামের রিপন হোসেন।
তাল বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে তাদের তাল সংগ্রহ করতে হয়। যাতায়াত ব্যয়, গাছ থেকে তাল কেটে নিচে নিয়ে আসা এবং সর্বশেষ সেটি বাজারে তোলা পর্যন্ত অনেক খরচ। তাল গাছের মালিককে দিতে হয় টাকা এসব খরচ বাদ দিলে খুব বেশি লাভ হয় না। পক্ষান্তরে ক্রেতারা জানান, তাল একটি মৌসুমী ফল, বাড়ির সকলেই তাল পছন্দ করেন। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে অনেকই তাল কিনতে পারছেনা। ক্রেতা সালমা আক্তার, জুয়েল রানা, মো. বাবু, শিল্পি রানী ঘোষ বলেন, সব বয়সের মানুষের কাছেই তাল পছন্দ। তবে বেশি পছন্দ শিশুদের। তাল কিনতে এসে দেখি একটি কাঁচা তাল ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর স নিলে প্রতিটি শাঁস দিতে হচ্ছে ৫ টাকা করে। এটি অবশ্যই বেশি দর বলে ক্রেতারা মনে করছেন।
উপজেলার সলুয়া বাজার, সিংহঝুলী, আড়পাড়া, মাড়ুয়া, স্বর্পরাজপুর, পাতিবিলা, হাকিমপুর, পাশাপোল, দশপাকিয়া, পুড়াপাড়া, চাঁদপাড়া বাজারসহ গ্রামাঞ্চলের ছোটখাটো বাজারগুলোতে ব্যাপকভাবে মিলছে কাঁচা তাল। গ্রামের মানুষ সাধ্যমত কাঁচা তালের স্বাদ নিতে ভুল করছেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালের শাঁস খেতে শুধু সুস্বাদু নয়, এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন, রোদের তীব্রতায় তালের শাঁস খেলে পানি শূন্যতা দূর হয়। খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। তালের শাঁসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। লিভার সুরক্ষায় তালের শাঁসের ভূমিকা রয়েছে। তালের শাঁসে ভিটামিন ‘এ’ থাকায় রাত কানা রোগ সারাতে সাহায্য করে। এছাড়া দৃষ্টি শক্তিকে প্রখর করতেও সাহায্য করে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাল গাছের গুরুত্ব অপরিসীম, তাই গাছ নিধন না করে বেশি বেশি তাল গাছ রোপণ ও প্রতিটি গাছ সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments