ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

0

স্পোর্টস ডেস্ক॥ ঢাকার মিরপুরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সহজ জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজেই জয় পেল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইংল্যান্ডকে ১১৭ রানে অল আউট করে দেয় বাংলাদেশ। জবাবে সাত বল হাতে রেখেই জয় ছিনিয়ে নেয় স্বাগতিক দল।
পাঁচটি কারণকে ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ঐতিহাসিক জয়ের পেছনে- ফাস্ট বোলাররা ছিল দুর্দান্ত : চব্বিশ বছর বয়সী হাসান মাহমুদ যে বলে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলারের উইকেট নেন, এমন ইয়র্কারে যে কোনও ব্যাটসম্যানের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যেত।
হাসান মাহমুদ প্রথম ম্যাচেও বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন। জস বাটলারের মতো ব্যাটসম্যানের সামনে তাকে যথেষ্ট পরিপক্ব মনে হয়েছে। পরপর দুই ম্যাচে হাসান জস বাটলারের উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ওভারে তিনি দিয়েছেন মাত্র চার রান। তাসকিন আহমেদ ডাউইড মালানের উইকেট নিয়ে সিরিজ জয়ের যাত্রা শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত চার ওভারে তাসকিন এক উইকেট নিয়ে রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি সাড়ে ছয়ের মতো। আরেক পেসার মুস্তাফিজুর রহমান এক উইকেট নিয়ে দিয়েছেন ১৯ রান।
সাকিবের অধিনায়কত্ব : সাকিব আল হাসানের ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের কথা বিশ্লেষকরা প্রায়ই বলে থাকেন, তবে এই দুই ম্যাচে তিনি ভালো সিদ্ধান্তের পাশাপাশি ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগের ম্যাচে পাওয়ারপ্লেতে স্পিনার দিয়ে শুরু করলেও, আজ প্রথম পাঁচ ওভার করেন তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ ওভারে এসে বল দেন নাসুম আহমেদের হাতে। পাওয়ারপ্লে শেষে নিজেই বল হাতে নিয়ে ১৯ বলে ২৫ রান তুলে ভয়ানক হয়ে ওঠা ফিল সল্টকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরান সাকিব আল হাসান। নিজের প্রথম ওভারে সাকিব মাত্র এক রান হজম করেন। সপ্তম, অষ্টম ও নবম ওভারে তিনটি বোলিং পরিবর্তনেই সাকিব ছিলেন সফল, তিনি নিজে উইকেট পেয়েছেন, পরের দুই ওভারে উইকেট তুলে নিয়েছেন হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এই সময়ের মধ্যে জস বাটলার ও মইন আলীকে প্যাভিলিয়নে ফেরায় বাংলাদেশের বোলাররা। প্রথম দশ ওভারে সাকিব ছয়জন বোলার ব্যবহার করেন। এই দশ ওভারে ইংল্যান্ড ৬৩ রান তুলতে চার উইকেট হারিয়েছে। ১৪ ওভারের মধ্যে সাকিব আটজন বোলার ব্যবহার করেন। বেন ডাকেট ও স্যাম কারান দুজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকায় নাজমুল হোসেন শান্ত ও আফিফ হোসেনকেও বল দেন সাকিব, সাথে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
মেহেদী হাসান মিরাজের একটি ওভার শেষ পর্যন্ত ১৫তম ওভারে মিরাজের বলে ডাউন দ্য উইকেট খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন স্যাম কারান ও ক্রিস ওকস। এর আগ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল কারান ও ডাকেট ভালো জুটি গড়বেন। মিরাজ তার তৃতীয় ওভারে এক রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন। এর পর ইংল্যান্ডের ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে যায়। মেহেদী হাসান মিরাজ শেষ পর্যন্ত চারটি উইকেট নেন। মাত্র ১২ রান দিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
ব্যাট হাতে বাংলাদেশ ছিল গড়পড়তা : ১১৭ রানের লক্ষ্যে যতটা সাবলীল ব্যাট করার কথা বাংলাদেশ তেমন ছিল না। উল্টো শুরু থেকেই বাজে শট নির্বাচনের ফল হিসেবে উইকেট বিলিয়ে এসেছে ব্যাটসম্যানরা। লিটন দাস সরাসরি বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন।
রনি তালুকদার ১৪ বল খেললেও মনে হয়েছে তিনি উইকেটে সাবলীল নন, জফরা আর্চারের বলে মইন আলীর হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছেন তিনি। তৌহিদ হৃদয় আদিল রশিদের বল খেলেছেন আগের ম্যাচের মতোই আগ্রাসী ভাবে।
তবে হৃদয়ও আপাতদৃষ্টিতে সহজ এক বলে আউট হয়েছেন, রেহান আহমেদের শর্ট পিচ বল তিনি সোজা ক্রিস ওকসের হাতে পাঠান।
ব্যাট হাতে শান্তর সাথে ইনিংস সামাল দেন মিরাজ : উইকেটের একপ্রান্তে টিকেছিলেন বাংলাদেশের ইন-ফর্ম ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত তিনি টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেরা ব্যাটসম্যানের ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ একটা পর্যায়ে বিপদে পড়ে গিয়েছিল, তখন মিরাজ এসে দুই ছক্কায় বিশ রানের একটি ইনিংস খেলেন। শান্ত ও মিরাজ ৩৪ বলে ৪১ রানের জুটি গড়েন। মাঝে সাকিব ও আফিফ আউট হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত তাসকিন আহমেদ বাংলাদেশের জয়সূচক রান নিয়ে নেন। শান্ত শেষ পর্যন্ত ৪৬ রানে অপরাজিত ছিলেন।