আজো নির্মিত হয়নি বাঘারপাড়ার জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন

0

 

বাঘারপাড়া (যশোর) সংবাদদাতা॥ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের আটটিতে নতুন ভবন নির্মাণ হলেও দুই পক্ষের রশি টানাটানিতে বাদ পড়েছে একটি। সেটি হচ্ছে জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভবন। একপক্ষ চাচ্ছেন বেতালপাড়ায় আর অন্যপক্ষ চাচ্ছেন যেখানে ছিলো (জহুরপুর) সেখানেই নির্মাণ হোক নতুন ভবন। ভবন নির্মাণ না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের সেবা ছাড়াও অন্যান্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ২০ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
এখনকার ইউনয়ন পরিষদের ভবনে জনপ্রতিনিধি ছাড়াও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদের এআই কর্মী, আনসার ভিডিপির ইউনিয়ন লিডার নিয়মিত বসে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। এখানে একজন উদ্যোক্তা বসেন। যিনি অনলাইনে নানা প্রকার সেবা দিয়ে থাকেন। বছর দুই ধরে বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রমও চলছে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে। জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভবন না থাকায় এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাসিন্দারা।
সূত্র জানিয়েছে, ১৯৭৪ সালের আগ পর্যন্ত বাঘারপাড়ায় সব থেকে বড় ইউনিয়ন ছিলো বন্দবিলা। কাজের সুবিধার্থে সরকার এ ইউনিয়নকে দুইভাগে ভাগ করে। নতুন অংশের নামকরণ হয় জহুরপুর ইউনিয়ন। ১৯৭৪ সালে নবগঠিত জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন হিংগারপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম। তিনি এক নাগাড়ে তিন মেয়াদে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
নজরুল ইসলাম জানান, বন্দবিলা থেকে যখন ইউনিয়ন ভাগ হয় তখন জহুরপুর গ্রামে বেশি প্রতিষ্ঠান ছিলো। এ গ্রামের মানুষও তখন বেশি শিক্ষিত ছিলো। থানা ও জেলা সদর থেকে জহুরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিলো। যে কারণে সেই সময়ে জহুরপুরে ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মাণ হয়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত যে কয়জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সবার বাড়ি জহুরপুরের উত্তর পাশের গ্রামগুলোতে। বেতালপাড়া তাদের বাড়ি থেকে নিকটে। যে কারণে তারা সকলেই চেয়েছেন পরিষদের ভবন বেতালপাড়াতেই হোক। বেতালপাড়ার সুবিধাজনক বিষয় হচ্ছে এটি ইউনিয়নের মাঝামাঝি অবস্থিত।
জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের নামে ৬০ শতক জমি দান করেছিলেন জহুরপুর গ্রামের ইলাহি চৌধুরি ও ৩০ শতক জমি দান করেন একই গ্রামের সুনিল সরকার ও তার ভাইয়েরা। ইলাহি চৌধুরির ছেলে মিন্টু চৌধুরি জানান, সরকার যখন ইউনিয়ন পরিষদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ শুরু করেন তখন নিয়ম ছিলো পরিষদের নামে ৫০ শতক জমি থাকতে হবে। তখনকার চেয়ারম্যান জহুরপুরে ইউনিয়ন পরিষদ ভবণ নির্মানের পক্ষে ছিলেন না। যে কারণে তিনি সরকারকে তখন যে তথ্য উপাত্ত দেন, তাতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের নামে ৩১ শতক জমির তথ্য উল্লেখ করেন। ফলে সে সময় আর জহুরপুরে ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মাণ হয়নি। মিন্টু চৌধুির অনেকটা ক্ষোভের সাথে বলেন, কী নেই জহুরপুরে? এখানে রয়েছে জহুরপুর রাম গোপাল বহুমুখী বিদ্যা প্রতিষ্ঠান, জহুরপুর খবিরউর রহমান কলেজ, জহুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জহুরপুর ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, জহুরপুর আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন, ডাকঘর প্রভৃতি। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা-বেচার জন্য একটি বাজারও রয়েছে। জহুরপুর বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে ব্যাংকিং সুবিধা রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের জন্যে যে ওয়াইফাই লাইন টানা হয়েছে তাও জোহরপুরেই দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের যে জরাজীর্ণ ভবন রয়েছে তার মাত্র ১০ গজ পাশেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রশস্ত বাঘারপাড়া -কালিগঞ্জ সড়কের অবস্থান। এ সব কথা বলার পর মিন্টু চৌধুরি এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, তাহলে কেন জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভবন এখানে হবে না?
জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দিনোহাম্মদ দীলু পাটোয়ারি বলেন, জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের নামে মাত্র ৮ শতক জমি আছে । যে কারণে সেখানে ভবন হয়নি। আমার সময়ে আমি চেষ্টা করেছি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী জায়গা বেতালপাড়াতেই ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মাণ হোক। যে কারণে এলাকার সব শ্রেণি -পেশার মানুষ দশ লাখ টাকা চাঁদা তুলে বেতালপাড়া বাজারের পাশেই ২৬ শতক জমি ক্রয় করেন। জহুরপুরে ইউনিয়ন পরিষদের পুরনো যে ভবন রয়েছে, তার ২০০ গজ পাশেই কালীগঞ্জ উপজেলার সীমানা। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। যে কারণে ইউনিয়নের সব গ্রামের মানুষ ইউনিয়ন পরিষদে সেবার জন্য সহজেই বেতালপাড়ায় আসতে পারবেন। বেতালপাড়ায় বাজারের কাছে রয়েছে সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভূমি অফিস। বেতালপাড়া বাজারে সপ্তাহে দুইদিন হাট বসে। এ বাজারে ব্যাংকিং সুবিধাও আছে। দিলু পাটোয়ারি আরো জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা পরিদর্শন হয়েছে। সেসব পরিদর্শন রিপোর্ট বেতালপাড়ার পক্ষেই রয়েছে। জহুরপুর গ্রামবাসীর অভিযোগের কারণে আজও নতুন ভবন থেকে বঞ্চিত রয়েছে জহুরপুরবাসী।
জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জাদান মিন্টু জানিয়েছেন, ভবনের অভাবে কোন কাজই ঠিকমত করতে পারছিনা। ভিজিএফ, ভিজিডির চাল ঘর ভাড়া করে রাখতে হচ্ছে। এমনকি টিসিবির পণ্য বিতরণ করতে হচ্ছে ঘর ভাড়া করে। পরিষদের সভা করতেও সমস্যা হচ্ছে। গ্রাম্য আদালত করতে পারছি না। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার না থাকায় সাধারণ মানুষ নানা ভোগান্তিতে পড়ছে। ভবন নির্মাণের জন্যে সম্প্রতি নতুন করে তথ্য উপাত্ত দেয়া হয়েছে। হয়তো দ্রুত ভবন নির্মাণ হবে।
পরিষদের নামে জায়গার বিষয়ে জহুরপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, জহুরপুর মৌজায় ৪৬৩ দাগে ৮ শতক ও ৪৬২ দাগে ৮২ শতক জমি রয়েছে। আবার বেতালপাড়াতে ইউনিয়ন পরিষদের নামে ২৬ শতক জমি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, বিগত দিনের কোন চেয়ারম্যানই জোহরপুরে অফিস করেননি। তারা বাড়িতে, চতুরবাড়িয়া ও বেতালপাড়া বাজারে বসেই পরিষদের কাজকর্ম সেরেছেন। তাদের সদিচ্ছা থাকলে জহুরপুরে অনেক আগেই ভবন নির্মাণ হোত। সব থেকে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে জমির বিষয়ে সরকারকে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। বিগত ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের ভবন নিয়ে ‘পাশ’ টানাটানি করা ঠিক হয়নি। সরকারেরও উচিত সঠিবভাবে পরিদর্শন করে দ্রুত বিষয়টির সমাধান করা।
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান জানিয়েছেন, আমি যত দূর জানি বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী আমার চেয়ে আরো ভালো বলতে পারবেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, বিষয়টি অনেকদিন ঝুলে আছে। আমি যতদূর জানি, এমপি স্যার, ইউএনও মহোদয় ও চেয়ারম্যান সাহেব মিলেই বেতালপাড়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। সেইভাবে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখন বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয়ের বিষয়।