অভ্যন্তরীণ ভোগ কমায় রফতানি বাড়ছে চায়ের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২০১৯ সালে দেশে রেকর্ড ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। এ উৎপাদনের বিপরীতে অভ্যন্তরীণ ভোগের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৫২ লাখ কেজি। বাকি চায়ের মধ্যে ছয় লাখ কেজি রফতানি হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যাপক হারে কমে গেছে, তবে বেড়েছে রফতানি।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের মজুদ ও সাম্প্রতিক সময়ে অবিক্রীত চা-ই দীর্ঘদিন পর পণ্যটির রফতানিতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি বছর শেষে বাংলাদেশ থেকে চা রফতানি বিগত কয়েক বছরের রেকর্ড ভাঙবে বলে আশা করছেন তারা।
গত দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি চা রফতানি হয়েছে ২০০২ সালে। ওই বছর সর্বমোট ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা রফতানি করে বাংলাদেশ। পরবর্তী সময়ে অভ্যন্তরীণ ভোগ বৃদ্ধি পাওয়া এবং উৎপাদন আশানুরূপ না বাড়ায় চা রফতানি কমতে কমতে ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৪০ হাজার কেজিতে নেমে আসে। মাঝে ২০১৭ সাল বাদে বাকি তিন বছরের কোনোটাতেই ছয় লাখের ঘর অতিক্রম করেনি রফতানি। দীর্ঘ সময় পর চলতি বছর ফের রফতানিতে গতি ফিরেছে। এ বছরের জানুয়ারি-জুলাইয়ে বাংলাদেশ থেকে চা রফতানি হয়েছে ১৫ লাখ ১০ হাজার কেজি, যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের চেয়েও ৪০ শতাংশ বেশি। চলতি আগস্টে আরো প্রায় এক লাখ কেজি চা রফতানি প্রক্রিয়াধীন। ফলে বছর শেষে বাংলাদেশ থেকে চা রফতানি ২০১৭ সালের ২৫ লাখ ৬০ হাজার কেজিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
দেশে কয়েক বছর ধরে চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৯ কোটি ৫২ লাখ কেজি ভোগ হয়েছিল। কিন্তু কভিড-১৯-এর কারণে মার্চের শেষ দিকে সারা দেশে সাধারণ ছুটির কারণে অফিস-আদালত ও সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চায়ের অভ্যন্তরীণ ভোগ অনেক কমে যায়। বাংলাদেশীয় চা সংসদের হিসাবে এ সময়ে দেশে চায়ের চাহিদা কমেছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ভোগ কমে যাওয়ায় রফতানিতে উৎসাহী হয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
চা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের দুই-তৃতীয়াংশ চায়ের ক্রেতা টি স্টল। চা দোকান, রেস্টুরেন্ট ও স্ট্রিট টি স্টলই দেশের চা বিপণনের অন্যতম মাধ্যম। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলেও সচেতনতা ছাড়াও মানুষের আনাগোনা কম থাকায় স্ট্রিট টি স্টল বা সড়কের টং চায়ের দোকানপাটের কার্যক্রম অনেকটা স্তিমিত। এ কারণে দেশে চায়ের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় চা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইকেল বিক্রয়কর্মীরা আগের তুলনায় অর্ধেক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করছেন। এসব কারণে উৎপাদন আগের বছরের প্রায় কাছাকাছি থাকলেও অভ্যন্তরীণ ভোগ কমায় দেশে চায়ের উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে রফতানিতে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম বলেন, বাংলাদেশের মোট চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি। এসব বাগানে প্রায় ছয় লাখের অধিক শ্রমিক কাজ করেন। চাহিদা কমলেও বাগানগুলো সচল রাখার স্বার্থে চা উৎপাদন ধরে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু নিলামে চায়ের চাহিদা প্রায় অর্ধেক কমে যাওয়ায় দামেও প্রভাব পড়েছে। চায়ের বাজার মূল্য অর্ধেক হয়ে যাওয়ায় এসব চা ক্রয় করে ব্যবসায়ীদের অনেকে রফতানির সুযোগ নিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে চলতি মৌসুমে চায়ের রফতানি আরো বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।