অপরিপক্ক তরমুজে সয়লাব বাজার

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোরের বাজারে চরাঞ্চলের তরমুজে সয়লাব হয়ে গেছে। শহরের মোড়ে মোড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মৌসুমের এ জনপ্রিয় ফল। তবে এসব তরমুজ অনেকটা অপরিপক্ক ও দাম নাগালের বাইরে বলে ক্রেতারা দাবি করেছেন। আড়ৎদারা বলছেন, চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার এসব তরমুজ বর্ষার আগেই তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। যেকারণে এর মান কিছুটা কম হলেও বাজারে আগে আসায় ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে।
রোববার ( ১২ মার্চ )যশোরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। প্রতিকেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে। তবে ক্রেতারা বলছেন, শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ও রুপদিয়ার তরমুজের বড় মোকামে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলেও খুচরা দোকানে তা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এতে তারা ঠকছেন বলেও অভিযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, যশোরের বাজারে যেসব তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই বরিশাল এলাকার পাথরঘাটা, কুয়াকাটা ও আমতলী এলাকার। নদীর চরাঞ্চলে এসব তরমুজ আবাদ হয়েছে। এসব তরমুজ সরাসরিই যশোরসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে চলে আসছে। তবে এসব তরমুজ আকারে বড় হলেও স্বাদ বা মিষ্টি তেমন না হওয়ায় ক্রেতারা বেশি দামে কিনে ঠকছেন বলে কয়েকজন অভিযোগ করেন।
রোববার বিকেলে দড়াটানা ব্রিজের পাশে দাঁড়িয়ে তরমুজ কিনছিলেন শরিফুল ইসলাম নামে এক স্কুল শিক্ষক। ৪৫ টাকা কেজি দরে ৭ কেজি দরে একটি তরমুজ কেনেন তিনি। দাম বেশি হলেও আত্মীয়ের বাড়িতে যাবেন বলে তিনি তরমুজ কিনতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, তরমুজের দাম এতো বেশি যে এই দূর্মূল্যের বাজারে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকদের পক্ষেও সম্ভব হচ্ছেনা। তারপরও নতুন ফল বাসায় নিয়ে গেলে সন্তানরা খুশি হবে বলে কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
পাশেই কথা সাইদুর রহমান নামে আরেক ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, বড় সাইজের এ তরমুজ দেখতে খুব সুন্দর। কিন্তু এর ভেতরে রঙ, স্বাদ, মিষ্টি কিছুই নেই। গত সপ্তাহে আড়াইশো টাকা দিয়ে একটা কিনে নিয়ে ঠকলেও সন্তানের আগ্রহের কারণে আবার আজ কিনতে এসেছি। তিনি বলেন, পাইকার বাজারে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলেও আমাদের কাছে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তরমুজের মৌসুম আসলেই কিছু ক্রেতা নানা অভিযোগ তোলেন। আমরা শ হিসেবে তরমুজ কিনে এনে কেজি দরে বিক্রি করলেও সামান্য লাভ থাকে। ৬ থেকে ৭ কেজির ওজনের তরমুজ ২৪ হাজার টাকা শ হিসেবে কিনে আনছি। খুচরা বাজারে এসে তা ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করলেও সামান্য লাভ হচ্ছে।
পাশেই ওলিল নামে আরেক খুচরা বিক্রেতা বলেন, তরমুজ মাত্র বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এজন্য ক্রেতাদের আগ্রহ আছে। কিন্তু অনেক ক্রেতা আছে তরমুজ ভেতরে লাল কিনা তা উপস্থিত থেকে কেটে দেখতে চায়। কোনক্রমে যদি লাল না হয় তাহলে সে তরমুজ ফেলে রেখে চলে যায়। এতে আমরা চরম লোকসানে পড়ি। তিনি বলেন, এখন বাজারে যেসব তরমুজ দেখা যাচ্ছে তার সিংহভাগ বরিশালের পাথরঘাটা, কুয়াকাটা ও আমতলীর চরাঞ্চলের। সামনে বর্ষার আগেই এসব তরমুজ বিক্রি করা হবে। যেকারণে কিছুটা মিষ্টি কম হলেও তরমুজের মান ভালো।
পুরাতন খুলনা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফলপট্টির আড়ৎদার শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর তরমুজের দাম তেমন বেশি না। তিনি বলেন, বরিশাল, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা থেকে এসব তরমুজ আনতে আমাদের প্রচুর পরিমাণ পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাছাড়া ক্ষেত থেকেও বেশি দামে তরমুজ আনতে হচ্ছে। ৬ থেকে ৮ কেজি ওজনের তরমুজ ১শ পিস ২৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর নিচের সাইজের তরমুজ ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, রোজার আগেই চরাঞ্চলের এসব তরমুজ বিক্রি শেষ হয়ে যাবে। এরপর সাতক্ষীরা, বাজুয়া, কয়রা এলাকার তরমুজ বাজারে সয়লাব হয়ে যাবে।
প্রায় একই কথা বলেন, আড়ৎদার মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, তরমুজের বৃহৎ পাইকারি মার্কেট রূপদিয়া। এখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তরমুজ আসে। এরপর ক্রেতারা এখান থেকে পিস হিসেবে তরমুজ কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে পিস প্রতি বড় আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। ছোট সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তবে যশোর শহরে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।